পাতা:রিক্তের বেদন - কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রিক্তের বেদন্

উচ্ছ্বসিত রোদনের বেগ আমাদের দুজনকেই মুস্‌ড়ে দিচ্ছিল!···হাজার হোক্, মায়ের মন ত!

 আকাশ যখন তা’র সঞ্চিত সমস্ত জমাট-নীর নিঃশেষে ঝরিয়ে দেয়, তখন তার অসীম নিস্তব্ধ বুকে সে কি একটা শান্ত সজল স্নিগ্ধতার তরল কারুণ্য ফুটে’ উঠে!

 মা’র একমাত্র জীবিত সন্তান, বি-এ পড়্‌ছিলুম; মায়ের মনে সে কত আশাই না মুকুলিত পল্লবিত হ’য়ে উঠেছিল! আমি আজ সে সব কত নিষ্ঠুরভাবে দলে’ দিলুম! কি করি, এ দিনে এ রকম যে না করে’ই পারি না।

 আমার পরিচিত সমস্ত লোক মিলে আমায় তিরস্কার কর্‌তে আরম্ভ করেছে যেন আমি একটা ভয়ানক অন্যায় করেছি। সবাই বল্‌ছে, আমার সহায়সম্বলহীনা মা’কে দেখ্‌বে কে!······হায়, আজ আমার মা যে রাজরাজেশ্বরীর আসনে প্রতিষ্ঠিতা, তা কাউকে বুঝাতে পার্‌ভ না!

 কা’কে বুঝাই যে, লক্ষপতি হয়ে দশ হাজার টাকা বিলিয়ে দিলে তাকে ত্যাগ বলে না, সে হচ্ছে দান। যে নিজেকে সম্পূর্ণ রিক্ত করে’ নিজের সর্ব্বস্বকে বিলিয়ে দিতে না পার্‌ল, সে ত ত্যাগী নয়। মা’র এই উঁচু ত্যাগের গগনস্পর্শী চূড়া কেউ যে ছুঁতেই পার্‌বে না। তাঁর এ গোপন বরেণ্য ত্যাগের মহিমা একা অন্তর্য্যামীই জানেন!

 এই ত সেই সত্যিকারের মোস্‌লেম-জননী, যিনি নিজ হাতে