পাতা:রিক্তের বেদন - কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রিক্তের বেদন্

বাপ্ একবার শহিদাকে দেখা ক’রে আয়! সে মেয়ে ত কেঁদে কেঁদে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে।”—আমি তখন জোর করে বলেছিলাম, “না মা, মরুকগে সে. আমি কিছুতেই দেখা কর্‌তে পার্‌ব না।”—হায়রে, খামখেয়ালির অহেতুক অভিমান!

 আজ বড় দুঃখে আমার সেই প্রিয় গানটা মনে পড়্‌ছে,

“দু’জনে দেখা হ’ল মধু-যামিনীরে—
কেন কথা কহিল না—চলিয়া গেল ধীরে?
নিকুঞ্জে দখিণাবায়, করিছে হায় হায়—
লতাপাতা দুলে’ দুলে’ ডাকিছে ফিরে ফিরে!—
দু’জনের আঁখিবারি গোপনে গেল ঝরে’—
দু’জনের প্রাণের কথা প্রাণেতে গেল মরে’;
আর ত হ’লনা দেখা জগতে দোহে একা,
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনা-তীরে!”

 উঃ, কি পান্‌সে উদাস আজকার ভোরের বাঙ্‌লাটা!—সদ্যসুপ্তোত্থিত বনের বিহগের আনন্দ-কাকলী আজ যেন কি রকম অশ্রুজড়িত আর দীর্ণ ব্যথিত!

 এই গাড়ী ছাড়ার ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দটা কত অরুন্তুদ গভীর। ঠিক যেন গির্জ্জায় কোন অতীত হতভাগার চিরবিদায়ের শেষ ঘণ্টাধ্বনি!

১৩