পাতা:লাজুকলতা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে যেন কনাদ রায়ের বৌ নয়, তার ছেলে মেয়ের মা নয়, তার সংসারের গিল্পী নয়, সে ভিন্ন একটা জাতের এবং কন্যাদি অন্য একটা জাতের প্রতিনিধি । ঘরে চাল নেই। এ কি নতুন কিছু ব্যাপার ? প্রায়ই একরকম চাল থাকে না, প্ৰায় সকলের ঘরেই। নলিনী এমনভাবে খবরটা দেয় যেন তারই পরামর্শে গভর্নমেণ্ট ঘরে ঘরে চালের অনটন ঘটিয়েছে, লোভী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চাল, আটা কাপড়-চোপড় সিকেয় তোলার সরকারী ষড়যন্ত্রে সেও যেন একজন অংশীদার। সেই যেন এই বিশ্বাসঘাতকের জগতে সবার সেরা বিশ্বাসঘাতক । ঘরের কোণে হাড়ি ঠেলে বলে ? অন্যদের হাতের কাছে পায় না, একমাত্র পুরুষ তাকেই পায় বলে ? কিন্তু তাকে পুরুষ মনে করে কি নলিনী ? কথা শুনে সন্দেহ জাগে । আজকেই চাল ফুরুলো ? বিষুদবার পর্য্যন্ত যেত না ? পেট বাডেনি দুটো ? বাড়িতে লোক বাড়ে নি, পেট বেড়েছে দুটো । পেট ! কথার কি ছিরি নলিনীর। পাকিস্তান থেকে দু’জন আত্মীয় এসে ঘাড়ে চেপেছে বটে এবং তাদের পেট ভরাতে হওয়ায় রেশনের আইনী চাল-আটা মঙ্গলবারেই শেষ হয়েছে। রেশন কার্ড সংগ্রহের হাঙ্গামা চুকলে আশা করা যায়। ভবিষ্যতের সপ্তাহে আবার বিষুদবার পর্য্যন্ত সরকারী বরাদ খাদ্য টানা চলবে । শুক্রবার সকালে নলিনী মনে করিয়ে দেবে ঘরে এক দান চাল নেই, একগুড়ো আটা নেই—তার আগে নয়। সে চোরবাজারে যাবে চালের সন্ধানে । বার বার এই কথা ভেবে বুকে বল পাওযা যাবে যে মোটে তিনটি দিন, শুধু আজ কাল পরশু, শুক্র শনি আর রবিবারটা চোরা চালে কোন রকমে চালান-হিসেব করে, আরও কম খেয়ে, কোনরকমে । R8