আমার কি—তোদেরই মেয়েকে একাদশী করতে হবে।” নিকটে দাঁড়াইয়া তরঙ্গ চাকুরাণী হাসিতেছে, সে সর্ব্বদা কালীকান্তবাবুর বাড়ীতে যাতায়াত করিত, সে রামা চাকরকে চিনিত, সেই বলিয়া দিয়াছে। কালীকান্তবাবু মারপিট দেখিয়া ক্ষিপ্তের ন্যায় উঠানময় বেড়াইতে লাগিল, বলিতে লাগিল, “কি সর্ব্বনাশ হইল। বাবুকে মারিয়া ফেলিল।” ইহা দেখিয়া নীলরতনবাবু আরও কোপাবিষ্ট হইয়া রামাকে বলিতে লাগিলেন, “তুই বেটাই জামাইকে কি খাওয়াইয়া পাগল করিয়া দিয়াছিস্ —মার বেটাকে জুতো।” এই কথা বলায়, যেমন শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির উপর বৃষ্টি চাপিয়া আইসে, তেমনি নির্দ্দোষী রামার উপর প্রহারবৃষ্টি চাপিয়া আসিল। মারপিটের চোটে বস্ত্রমধ্য হইতে লুকান স্বর্ণগোলকটি পড়িয়া গেল। দেখিয়া তরঙ্গ চাকুরাণী তাহা কুড়াইয়া লইয়া নীলরতনবাবুর হস্তে দিল। বলিল, “ও মিন্সে চোর! দেখুন, ও একটা সোণার তাল চুরি করিয়া রাখিয়াছে।” “দেখি” বলিয়া নীলরতনবাবু স্বর্ণগোলক হস্তে লইলেন,—অমনি তিনি রামাকে ছাড়িয়া দিয়া, সরিয়া দাঁড়াইয়া কোঁচার কাপড় খুলিয়া মাথায় দিলেন; তরঙ্গও মাথার কাপড় খুলিয়া, কোঁচা করিয়া পরিয়া, পাদুকা হস্তে রামাকে মারিতে প্রবৃত্ত হইল।
উদ্ধব তরঙ্গকে বলিল, “তুই মাগি আবার এর ভিতর এলি কেন?”
তরঙ্গ বলিল, “কাকে মাগি বলিতেছিস্?”
উদ্ধব বলিল, “তোকে।”
“আমাকে ঠাট্টা?” এই বলিয়া তরঙ্গ মহাক্রোধে হস্তের পাদুকার দ্বারা উদ্ধবকে প্রহার করিল। উদ্ধবও ক্রুদ্ধ হইয়া, স্ত্রীলোককে মারিতে না পারিয়া, নীলরতনবাবুর দিকে চাহিয়া বলিল, “দেখুন দেখি কর্ত্তা মহাশয়, মাগির কত বড় স্পর্দ্ধা, আমাকে জুতা মারে!” কর্ত্তা তখন একটুখানি ঘোমটা টানিয়া, একটু রসের হাসি হাসিয়া, মৃদুস্বরে কহিলেন, “তা মেরেছেন মেরেছেন, তুমি রাগ করিও না। মুনিব —মারতে পারেন।”
শুনিয়া উদ্ধব আরও ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “ও আবার কিসের মুনিব—ওও চাকর, আমিও চাকর। আপনি এমনি আজ্ঞা করেন! আমি আপনারই চাকর, ওর চাকর কেন হব? আমি এমন চাকরি করি না।”
শুনিয়া কর্ত্তা আবার একটু মধুর হাসি হাসিয়া বলিলেন, “মরণ আর কি! বুড়ো বয়সে মিন্সের রস দেখ? আমার চাকর আবার তুমি কিসে হতে গেলে?”
উদ্ধর অবাক্ হইল, মনে করিল, “আজ কি পাগলের পাড়া পড়িয়াছে নাকি?” উদ্ধব বিস্মিত হইয়া রামাকে ছাড়িয়া দাঁড়াইল।