বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:লোকরহস্য-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
লোকরহস্য

 সাহেব। সেই যে—জুষ্টিকেশন।

 হাকিম। ওহো—Jurisdiction? বটে। তুমি কি বিলাতী সাহেব?

 সা। হামি সাহেব আছে।

 হা। রংটা এত কাল কেন?

 সা। মুই কোয়লার কাম করেছিল।

 হা। তোমার বাপের নাম কি?

 সা। বাপের নামে কোটের কি কাম আছে?

 হা। বলি সেটা জানা আছে কি?

 সা। হামার বাপ বড় আদমি ছেলো—লেকেন লামট। এখন মনে পড়্‌ছে না।

 হাকিম। মনে কর না হয়। তোমার নামটা কি?

 সাহেব। আমার নাম জান সাহেব—জান ডিক্‌সন্।

 হা। বাপের নাম ডিক্‌সন্ নয়?

 সা। হোবে—ডিক্‌সন্ হোতে পারে—লেকেন—

 বাদীর মোক্তার এই সময়ে বলিল, “হুজুর, ওর বাপের নাম গোবর্দ্ধন সাহেব।”

 সাহেব রাগ করিয়া বলিল, “গোবর্দ্ধন হইলো ত কি হইলো—তোমার বাপের নাম যে রামকান্ত—তোমার বাপ চূড়া বেচিত—আমার বাপ বড় আদমি ছেলো।”

 হাকিম। তোমার বাপ কি করিত?

 সাহেব। বড় লোকের সাদি দিত।

 হাকিম। সে আবার কি? ঘটকালি করিত নাকি?

 মোক্তার। আজ্ঞে না—বিবাহের বাজনার জয়ঢাক ঘাড়ে করিত।

 অনেকে হাসিল। হাকিম জুরিস্‌ডিক্‌নের আপত্তি নামঞ্জুর করিয়া, বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন। ফরিয়াদীকে তলব করায় রূপার পৈছা হাতে নধর কালো কোলো একজন স্ত্রীলোক উপস্থিত হইল। তাহাকে যেরূপ জিজ্ঞাসাবাদ করা হইল, আর সে যেরূপ উত্তর দিল, নিম্নে লিখিতেছি;—

 প্রশ্ন। তোমার নাম কি?

 উত্তর। রঙ্গিণী জেলেনী।

 প্রশ্ন। তুমি কি কর?

 উত্তর। বিল খালে মাছ ধরে বেচি।