পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ab- লোকসাহিত্য কিন্তু ইংরাজের নূতনস্থষ্ট রাজধানীতে পুরাতন রাজসভা ছিল না, পুরাতন জাদর্শ ছিল না। তখন কবির আশ্রয়দাতা রাজা হইল সর্বসাধারণ নামক এক অপরিণত স্থূলায়তন ব্যক্তি, এবং সেই হঠাৎ-রাজার সভার উপযুক্ত গান হইল কবির দলের গান । তখন যথার্থ সাহিত্যরস-আলোচনার অবসর যোগ্যতা এবং ইচ্ছা কয়জনের ছিল ? তখন নূতন রাজধানীর নূতনসমৃদ্ধিশালী কৰ্মশ্রাস্ত বণিক-সম্প্রদায় সন্ধ্যাবেলার বৈঠকে বসিয়া দুই দণ্ড আমোদের উত্তেজনা চাহিত, তাহারা সাহিত্যরস চাহিত না । কবির দল তাহাদের সেই অভাব পূর্ণ করিতে আসরে অবতীর্ণ হইল। তাহার। পূর্ববর্তী গুণীদের গানে অনেক পরিমাণে জল এবং কিঞ্চিৎ পরিমাণে চটক মিশাইয়া, তাহাদের ছন্দোবন্ধ সৌন্দর্য সমস্ত ভাঙিয়া নিতান্ত স্থলভ করিয়া দিয়া, অত্যন্ত লঘু স্বরে উচ্চৈঃস্বরে চারিজোড়া ঢোল ও চারিখানা কাসিসহযোগে সদলে সবলে চীৎকার করিয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে লাগিল । কেবল গান শুনিবার এবং ভগবরস সম্ভোগ করিবার যে মুখ তাহাতেই তখনকার সভ্যগণ সন্তুষ্ট ছিলেন না— তাহার মধ্যে লড়াই এবং হার-জিতের উত্তেজনা থাকা আবশ্বক ছিল । সরস্বতীর বীণার তারেও ঝন ঝন শব্দে ঝংকার দিতে হইবে আবার বীণার কাষ্ঠদও লইয়াও ঠক্ ঠক্ শব্দে লাঠি খেলিতে হইবে। নূতন হঠাৎ-রাজার মনোরঞ্জনার্থে এই এক অপূর্ব নূতন ব্যাপারের স্বষ্টি হইল । প্রথমে নিয়ম ছিল, দুই প্রতিপক্ষদল পূর্ব হইতে পরম্পরকে জিজ্ঞাসা করিয়া উত্তর-প্রত্যুত্তর লিখিয়া আনিতেন ; অবশেষে তাহাতেও তৃপ্তি হইল না— আসরে বসিয়া মুখে মুখেই বাগযুদ্ধ চলিতে লাগিল। এরূপ অবস্থায় যে কেবল প্রতিপক্ষকে আহত করা হয় তাহা নহে, ভাষা ভাব ছন্দ সমস্তই ছারখার হইতে থাকে। শ্রোতারাও বেশি কিছু প্রত্যাশ করে না— কথার কৌশল, অকুপ্রাসের ছটা এবং উপস্থিতমত জবাবেই সভা জমিয়া উঠে এবং বাহবা উচ্ছসিত হইতে থাকে ; তাহার উপরে আবার চারজোড়া ঢোল, চারখানা কাসি