পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ রইল, বকশিশের ভয় না দেখালে এখানেই তোমার গলায় পরিয়ে দিতুম। বলিয়াই চলিয়া গেল । গানের আসর শেষ হইল। মনে হইল জীবনটা যেন আজ সার্থক হইল । ক্রমশঃ প্রসাদ বিতরণের আয়োজন আরম্ভ হইল। তাহাকে অন্ধকারে একটু আড়ালে ডাকিয়া আনিয়া বলিলাম, ও মালা রেখে দাও, এখানে নয়, বাড়ি ফিরে গিয়ে তোমার হাত থেকে পরব। রাজলক্ষ্মী বলিল, এখানে ঠাকুরবাড়িতে পরে ফেললে আর খুলতে পারবে না এই বুঝি ভয় ? না, ভয় আর নেই, সে ঘুচেছে। সমস্ত পৃথিবী আমার থাকলে তোমাকে আজ তা দান করতাম । উঃ—কি দাতা । সে তোমারি থাকত গো । বলিলাম, তোমাকে আজ অসংখ্য ধন্যবাদ । কেন বলো ত ? বলিলাম, আজ মনে হচ্ছে তোমার আমি যোগ্য নই। রূপে, গুণে, রসে, বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, স্নেহে, সৌজন্যে পরিপূর্ণ যে ধন আমি অযাচিত পেয়েচি, সংসারে তার তুলনা নেই। নিজের অযোগ্যতায় লজ্জা পাই লক্ষ্মী, তোমার কাছে সত্যই আমি বড় কৃতজ্ঞ । রাজলক্ষ্মী বলিল, এবার কিন্তু সত্যই আমি রাগ করব । তা ক’রে। ভাবি এ ঐশ্বর্য আমি রাখব কোথায় ? কেন, চুরি যাবার ভয় নাকি ? না, সে মানুষ ত চোখে দেখতে পাইনে লক্ষ্মী। চুরি করে তোমাকে ধরে রাখবার মত বড় জায়গাই বা সে বেচারা পাবে কোথায় ? রাজলক্ষ্মী উত্তর দিল না, হাতটা আমার টানিয়া ক্ষণকাল বুকের কাছে ধরিয়া রাখিল । তারপরে বলিল, এমন করে মুখোমুখি অন্ধকারে দাড়িয়ে থাকতে দেখলে লোকে হাসবে যে ! কিন্তু ভাবচি, রাত্রে তোমাকে শুতে দিই কোথায়—জায়গা ত নেই। না থাক, যেখানে হোক শুয়ে রাত্রিটা কাটবেই। তা কাটবে, কিন্তু শরীর ত ভালো নয়, অসুখ করতে পারে যে । তোমার ভাবনা নেই, ওরা ব্যবস্থা একটা করবেই। রাজলক্ষ্মী চিন্তার স্বরে বলিল, দেখচি ত সব, ব্যবস্থা কি করবে জানিনে ; কিন্তু ভাবনা নেই আমার, আছে ওদের ? এসো। যা হোক দুটি খেয়ে শুয়ে পড়বে | বাস্তবিক লোকের ভিড়ে শোবার স্থান ছিল না । সে রাত্রে কোনমতে একটা খোলা বারান্দায় মশারি টাঙাইয়া আমার শয়নের ব্যবস্থা হইল। রাজলক্ষ্মী খুত > 3 a.