পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে অরুণ অধিকতর বিস্মিত হইয়া বলিল, মান ? তোমাদের ? নিশ্চয় রাখব সন্ধা । তা আমি জানতুম, বলিয়া সন্ধ্যা ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কছিল, বাবার কাছে শুনলুম একদিন তুমি কাজে যা শুনি, বাড়ি থেকে পর্য্যন্ত বেরেওনি— কেন শুনি ? আমার শরীর ভাল নেই। সন্ধ্যা কহিল, না থাকা আশ্চর্য্য নয়, কিন্তু তা নয়। বাবা তা হলে সকলের আগে সেই কথাটাই বলতেন । অরুণ চুপ করিয়া রহিল। সন্ধ্যা নিজে ও একটুখানি স্থির থাকিয়া পুনশ্চ কহিল, কারণ আমি জানি অরুণদা ; কিন্তু আমাদের বাড়িতে তুমি আর কখনো যেয়ে না। অরুণ আস্তে আস্তে ঘাড় নাড়িয়া বলিল, না—শুধু কেবল তোমাদের বাড়িতে নয়—এ-গ্রামের বাস তুলে দিয়ে আর কোথাও যাব কি না, যেগায় বিনা দোষে মানুষে মানুষকে এত হীন, এত লাঞ্ছিত করে না-অামি সেই কথাই দিন-রাত ভাবচি । সন্ধ্যা মুখ তুলিয়া বলিয়া উঠিল, জন্মভূমি ত্যাগ করে চলে যাবে? অরুণ বলিল, জন্মভূমিষ্ট ত আমাকে ত্যাগ করচে সন্ধ্যা। আজ তোমার কাছেও আমি এমন অশুচি হয়ে গেছি যে, তোমাকেও মুখের পান ফেলে দিতে হ’লে । এই ঘুণ। সয়েও কি আমাকে তুমি এই গ্রামে থাকতে বল ? সন্ধা নিরুত্তরে অধোমুখে দাড়াইয়া রহিল । অরুণ কহিল, আচারের নাম দিয়ে এই চিরাগত সংস্কার তোমাদের মনটাকে হয়ত আর স্পর্শ পৰ্য্যস্ত করে না, কিন্তু যেখানে করে, সেখানের মামুষের হাত থেকে মানুষের এই লাঞ্ছন। মানুষকে যে বেদনায় কতদূর বিস্ক করতে পারে, এই কথাটা যে একদিন আমাকে এমন করে অন্তভব করতে হবে এ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি সন্ধা । সন্ধ্য ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া কহিল, কিন্তু এ লাঞ্ছনা কি তুমি নিজেই টেনে আনোনি অরুণদা ? অরুণ কহিল, কি জানি। কিন্তু, আচ্ছা সন্ধ্য, প্রায়শ্চিত্ত করলে কি এর কোন উপায় হয় বলতে পার ? লক্ষ্য বলিল, হতে পারে, কিন্তু একদিন আত্মমর্য্যাদা হারাবার ভয়ে তুমি রাজী হওনি _নর আজ যদি নিজেই তাকে বিসর্জন দাও ত, আমি বলি অরুণদা, তুমি আর যাই কর, এখানে আর থেকে না । অরুণ কহিল, কিন্তু তোমার ঘৃণা যে সেখানেও আমাকে টিকতে দেবে না ! কিন্তু তাতেই বা তোমার কতটুকু ক্ষতি-বৃদ্ধি ? এক কহিল, সন্ধ্যা ! এ-কথা তুমিও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারলে ? মহা বলিল, তুমি যে আমার লজ্জার, আমার সঙ্কোচের আবরণটুকু রাখতে ১৮৯