শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ জামার মিছে কথা হতো। গাঙলীমশাই যদি কিছু বলে থাকেন সে তার নিজের কথা, জামার নয়। তবু তার হয়ে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি। বিজয় জিজ্ঞাসা করিল, আপনাদের কবে বিয়ে, তেরই জ্যৈষ্ঠ ? তা হলে প্রায় মাস-খানেক বাকী রইল- না ? ই, তাই । এর আর পরিবর্তন নেই বোধ করি ? বোধ হয় নেই। অন্ততঃ সেই ভরসাই তিনি দিয়ে গেছেন । বিজয় বহুক্ষণ নীরবে থাকিয়া কহিল, তা হলে আর কিছু আমার বলবার নেই, কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ জীবনটা একবার ভেবে দেখলেন না আমার এই বড় পরিতাপ । অনুরাধা বলিল, একবার নয়, একশোবার ভেবে দেখেছি ছোটবাবু। এই আমার রাত্রিদিনের চিন্ত । আপনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাবার সত্যিই ভাষা খুজে পাইনে, কিন্তু আপনি নিজে একবার আমার কথা ভেবে দেখুন দিকি । অর্থ নেই, রূপ নেই, গৃহ নেই, অভিভাবকহীন একাকী, পল্লীগ্রামের অনাচার-অত্যাচার থেকে কোথাও গিয়ে দাড়াবার স্থান নেই—বয়স হলো তেইশ-চব্বিশ-ইনি ছাড়া আমাকে কে বিয়ে করতে চাইবে বলুন ত? তখন অল্পের জন্য কার কাছে গিয়ে হাত পেতে দাড়াব ? শুনে আপনারই বা কি মনে হবে ? এ সবই সত্য, প্রতিবাদে কিছুই বলিবার নাই। মিনিট দুই-তিন নিরুত্তরে দাড়াইয়া বিজয় গভীর অনুতাপের সহিত বলিল, এ-সময়ে আপনার কি আমি কোন উপকারই করতে পারিনে ? পারলে খুশী হবে । অনুরাধ কহিল, আপনি আমার অনেক উপকার করেচেন যা কেউ করত না। আপনার আশ্রয়ে আমি নিৰ্ভয়ে আছি—ছেলে দুটি আমার চন্দ্র-স্থর্ষ্যি--এই আমার ঢের । আপনার কাছে প্রার্থনা, শুধু মনে মনে আর আমাকে আমার দাদার দোষের ভাগী করে রাখবেন না, আমি জেনে কোন অপরাধ করিনি । সে আমি জানতে পেরেচি, আপনাকে বলতে হবে না। বলিয়া বিজয় ধীরে ধীরে বাহিরে চলিয়া গেল । ՖԵrՀ
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৯২
অবয়ব