পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন মধ্যে তাহার নিজেরও সায় ছিল। পৃথিবী জুড়িয়া সমস্ত মানব-জাতির এই প্রাচীন ও পবিত্র অনুষ্ঠানের প্রতি এতবড় অবজ্ঞায় অজিতের মন ধিক্কারে পূর্ণ হইয়া গেল। মুহূৰ্ত্তকাল মৌন থাকিয়া কহিল, তোমার কাছে গৰ্ব্ব করা আমার সাজে না । কিন্তু তোমার কাছে আর কিছুই গোপন করব না । এরা বলেন, সংসারে কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ করাই পুরুষের সবচেয়ে বড় পুরুষার্থ। বুদ্ধির দিক দিয়ে এ আমি বিশ্বাস করি এবং এ সাধনায় সিদ্ধিলাভের চেয়ে মহত্তর কিছু নেই এ-বিষয়েও আমি নিঃসংশয় । কাঞ্চন আমার যথেষ্ট আছে, তাতে লোভ নেই, কিন্তু সমস্ত জীবনে ভালবাসার কেউ নেই, কেউ কখনো থাকবে না, মনে হলে বুক যেন শুকিয়ে ওঠে। ভয় হয়, অস্তরের এ দুর্বলতা হয়ত আমি মরণকাল পর্য্যস্ত জয় করতে পারবো না । অদৃষ্ট্রে তাই যদি কখনো ঘটে, আশ্রম ত্যাগ করে আমি চলে যাবো। কিন্তু তোমার আহবান তার চেয়েও মিথ্যে । ও-ডাকে সাড়া দিতে আমি পারবো না । একে মিথ্যে বলচেন কেন ? 尊 মিথ্যেই ত। মনোরম সত্যই কখনো আমাকে ভালবাসেনি, তার আচরণে বোঝা যায়, কিন্তু শিবনাথের প্রতি শিবানীর ভালবাসা ত আমি নিজের চোখেই দেখেচি। সেদিন তার যেন সীমা ছিল না, কিন্তু আজ তার চিহ্ন পৰ্য্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে গেচে । কমল কহিল, আজ যদি তা গিয়েই থাকে, সেদিন কি শুধু আমার ছলনাই আপনার চোখে পড়েছিল ? অজিত বলিল, সে তুমিই জানে, কিন্তু আজ মনে হয় নারী-জীবনে এর চেয়ে মিথ্যে বুঝি আর নেই। কমলের চোখের দৃষ্টি প্রখর হইয়া উঠিল, কহিল, নারী-জীবনের সত্যসত্য নির্দেশের ভার নারীর পরেই থাকে। সে বিচারের দায়িত্ব পুরুষের নিয়ে কাজ নেই —মনোরমারও না, কমলেরও না। এমনি করেই সংসারে চিরদিন স্থায়-বিড়ম্বিত, নারী অসম্মানিত এবং পুরুষের চিত্ত সঙ্কীর্ণ কলুষিত হয়ে গেছে। তাই এই মিথ্যেমামলার আর নিম্পত্তি হতে পেলে না । অবিচারে কেবল একপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না অজিতবাবু, দুপক্ষের সর্বনাশ করে। সেদিন শিবনাথ যা পেয়েছিলেন ছনিয়ার কম পুরুষের ভাগ্যেই জোটে, কিন্তু আজ তা নেই। কেন নেই এই তর্ক ভূলে পুরুষের মোটা হাতে, মোটা দণ্ড ঘুরিয়ে শাসন করা চলে, কিন্তু ফিরে পাওয়া যায় না। সেদিনের কথাটা যেমন সত্যি, আজকের না-থাকাটাও ঠিক তত বড়ই সত্যি | শঠতার ছেড়া-কঁাখা মুড়ে একে ঢাকা দিতে লজ্জাবোধ করেচি বলে পুরুষের বিচারে এই হ’লে SS4 ఘో=R&