পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (নবম সম্ভার).djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেষ প্রশ্ন আগুবাবু নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, এমনিই হয় অজিত, এমনিই হয়। জীবনের অনেক বড় বস্তুকেই চেনা যায় শুধু তাকে হারিয়ে । তার পরে ? অজিত বলিল, তার পরে সেই আরশীর স্বমুখে দাড়িয়ে যৌবনান্ত দেহের সুশ্নাতিস্বল্প বিশ্লেষণ আছে । একদিন কি ছিল এবং আজ কি হতে বসেচে । কিন্তু সে বিবরণ আমি বলতেও পারবো না, পড়তেও পারবো না । নীলিমা পূর্বের মতই ব্যস্ত হইয়া বাধা দিল, ন ন না, অজিতবাবু, ও থাকৃ। ঐ জায়গাটা বাদ দিয়ে আপনি বলুন। অজিত কহিল, মহিলাটি বিশ্লেষণের শেষের দিকে বলেচেন, নারীর দৈহিক সৌন্দর্য্যের মত সুন্দর বস্তুও যেমন সংসারে নেই, এই বিকৃতির মত অমুনার বস্তুও হয়ত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নেই। আগুবাবু বলিলেন, এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি অজিত । নীলিমা মাথা নাড়িয়া প্রতিবাদ করিল, না একটুও বাড়াবাড়ি নয়। এ সত্যি। আপ্তবাবু বলিলেন, কিন্তু মেয়েটির যা বয়েস তাকে তো বিকৃতির বয়স বলা চলে না নীলিমা । , নীলিমা কহিল, চলে। কারণ ও তো কেবলমাত্র বছর গুণে মেয়েদের বেঁচে থাকবার হিসাব নয়, এর আয়ুষ্কাল যে অত্যন্ত কম, এ-কথা আর যেই ভুলুক, মেয়েদের ভুললে চলবে না । অজিত ঘাড় নাড়িয়া খুশি হইয়া বলিল, ঠিক এই উত্তরটি তিনি নিজে দিয়েচেন । বলেচেন—আজি থেকে সমাপ্তির শেষ প্রতীক্ষণ করে থাকাই হবে অবশিষ্ট জীবনের একটিমাত্র সত্য। এতে সাম্বন নেই, আনন্দ নেই, আশা নেই জানি, তবু তো উপহাসের লজ্জা থেকে বাঁচবো। ঐশ্বর্ঘ্যের ভগ্নস্তুপ হয়ত আজও কোন দুর্ভাগার মনোহরণ করতে পারে, কিন্তু সে-মুগ্ধতা তার পক্ষেও যেমন বিড়ম্বনা, আমার নিজের পক্ষেও হবে তেমনি মিথ্যে । যে-রূপের সত্যকার প্রয়োজন শেষ হয়েচে, তাকেই নানাভাবে, নানা সজ্জায় সাজিয়ে ‘শেষ হয়নি’ বলে ঠকিয়ে বেড়াতে আমি নিজেকেও পারবে না, পরকেও না । আর কেহ কিছু কহিল না, শুধু নীলিম কহিল, স্বন্দর। কথাগুলি আমার ভারি সুন্দর লাগলো অজিতবাবু। ■ সকলের মত হরেন্দ্রও একমনে শুনিতেছিল ; সেই মন্তব্যে খুশি হইল না, কহিল, এ আপনার ভাবাতিশয্যের উচ্ছাস বৌদি, খুব ভেবে বলা নয়। উচু ডালে শিমুলফুলও হঠাৎ সুন্দর ঠেকে, তবু ফুলের দরবারে তার নিমন্ত্রণ পৌছায় না। রমণীর দেহ কি এমনি তুচ্ছ জিনিস যে, এছাড়া আর তার কোন প্রয়োজনই নেই ? &X6*