পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (পঞ্চম সম্ভার).djvu/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেনা-পাওনা সাগর কহিল, তা সব ভাল। এই মঙ্গলেই মেয়েটার অভিবেক শেষ হবে। তবে তোমারও ভাবনা নেই—কাশীবাসের বাবদে প্রার্থনা জানালে শ-খানেক টাকা পেতে পারবে । ষোড়শী কহিল, প্রার্থনা জানাতে হবে কার কাছে ? সাগর বলিল, বোধ হয় হুজুরের কাছেই । যোড়শী জিজ্ঞাসা করিল, আর সকলের ? যাদের জমি-জমা সব গেল তাদের ? সাগর বলিল, ভয় নেই মা, চিরকাল ধরে যা হয়ে আসচে তা থেকে তারা বাদ বাবে না। এই যে সেদিন প্রজার পক্ষ থেকে পাচ হাজারের নজর দাখিল হ’লো তার খতের কাগজগুলো ত রায়মশাইয়ের সিন্দুক ছাড়া আর কোথাও জায়গা পায়নি, নইলে তিনি একটা হুকুম দিতে ন-দিতে ভিড় করে আজ সকলে যাবেই বা কেন ? ষোড়শী কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল, পরে কহিল, আর তোদের ? সাগর কহিল, আমাদের খুড়ো-ভাইপোর ? একটু হাসিয়া বলিল, সে ব্যবস্থাও তিনি করেচেন, সাত সাতটা দিন কিছু আর চুপ করে বসে ছিলেন না। পাকা লোক, দারোগ-পুলিশ মুঠোর মধ্যে, কোশ-দশেকের মধ্যে কোথাও একটা ডাকাতি হতে যা দেরি। জানো ত মা, বছর-দুই করে একবার থেটে এসেচি, এবার দশ বছরের মত একেবারে নিশ্চিন্ত, খুড়োর গঙ্গালাভ তার মধ্যেই হবে, তবে আমার বয়সটা এখনও কম, হয়ত আর একবার দেশের মুখ দেখতে পাবো । বলিয়া সে হাসিতে লাগিল । ষোড়শী ভয় পাইয়া কহিল, স্থা র, এ কি তোরা সত্যি বলে মনে করিস্ ? সাগর বলিল, মনে করি ? এ ত চোখের উপর স্পষ্ট দেখতে পাচ্চি মা । জেলের বাইরে আমাদের রাখতে পারে এ সাধ্যি কারও নেই। বেশি নয়, দু'মাস এক মাস দেরি, হয়ত নিজের চোখেই দেথে যেতে পারবে মা । ষোড়শী কহিল, আর যারা ওখানে গেছে, তাদের ? সাগর বলিল, তাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও মন্দ । জেলের মধ্যে খেতে দেয়, যা হোক আমরা দুটো খেতে পাবে, কিন্তু এরা তা ও পাবে না। নালিশগুলো সব ডিক্রি হতে যা বিলম্ব, তার পরে রায়মশায়ের নিজ জোতে জন-খেটে দু’মুঠো জোটে ভাল, না হয় আসামের চা-বাগান ত আছেই । কেমন মা, তোমারই কি মনে পড়ে না ওই বোনের ডাঙাটায় আগে আমাদের কত ঘর ভূমিজ বাউরির বসতি ছিল, কিন্তু আজ তারা কোথায় ? কতক গেল কয়লা খুঁড়তে, কতক গেল চালান হয়ে চা-বাগানে । কিন্তু আমি দেখেচি ছেলেবেলায় তাদের জমি-জমা হাল-বলদ । দু-মুঠো ধানের সংস্থান তাদের সব্বায়ের ছিল। আজ তাদের অৰ্দ্ধেক এককড়ি নন্দীর, অৰ্দ্ধেক রায়মশায়ের । ষোড়শী স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া সমস্ত ব্যাপারের গুরুত্ব উপলব্ধি করিতে লাগিল । Y st «R-»«