বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শান্তিনিকেতন

কাছে এসেছেন।

 ফুলও আমাদের কাছে সেই প্রিয়তমের দূত হয়ে আসে। সংসারের সোনার লঙ্কায় রাজভোগের মধ্যে আমরা নির্বাসিত হয়ে আছি; রাক্ষস আমাদের কেবলই বলছে, ‘আমিই তোমার পতি, আমাকেই ভজনা করো।’

 কিন্তু, সংসারের পারের খবর নিয়ে আসে ওই ফুল। সে চুপিচুপি আমাদের কানে এসে বলে, ‘আমি এসেছি, আমাকে তিনি পাঠিয়েছেন। আমি সেই সুন্দরের দূত, আমি সেই আনন্দময়ের খবর নিয়ে এসেছি। এই বিচ্ছিন্নতার দ্বীপের সঙ্গে তাঁর সেতু বাঁধা হয়ে গেছে; তিনি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্যে ভোলেন নি, তিনি তোমাকে উদ্ধার করবেন। তিনি তোমাকে টেনে নিয়ে আপন করে নেবেন। মোহ তোমাকে এমন করে চিরদিন বেঁধে রাখতে পারবে না।’

 যদি তখন আমরা জেগে থাকি তো তাকে বলি, ‘তুমি যে তাঁর দূত তা আমরা জানব কী করে।’ সে বলে, ‘এই দেখো আমি সেই সুন্দরের আংটি নিয়ে এসেছি। এর কেমন রঙ, এর কেমন শোভা!’

 তাই তো বটে। এ-যে তাঁরই আংটি, মিলনের আংটি। আর-সমস্ত ভুলিয়ে তখনি সেই আনন্দময়ের আনন্দস্পর্শ আমাদের চিত্তকে ব্যাকুল করে তোলে। তখনি আমরা বুঝতে পারি, এই সোনার লঙ্কাপুরীই আমার সব নয়— এর বাইরে আমার মুক্তি আছে; সেইখানে আমার প্রেমের সাফল্য, আমার জীবনের চরিতার্থতা।

 প্রকৃতির মধ্যে মধুকরের কাছে যা কেবলমাত্র রঙ, কেবলমাত্র গন্ধ, কেবলমাত্র ক্ষুধানিবৃত্তির পথ চেনবার উপায়চিহ্ন, মানুষের হৃদয়ের কাছে তাই সৌন্দর্য, তাই বিনা প্রয়োজনের আনন্দ। মানুষের মনের মধ্যে

৯৮