বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আত্মবোধ

 অনন্তের মধ্যে এই যে বিরহবেদনা সমস্ত বিশ্বকাব্যকে রচনা করে তুলছে, কবি জ্ঞানদাস তাঁর ভগবানকে বলছেন, এই বেদনা তোমাতে আমাতে ভাগ করে ভোগ করব— এ বেদনা যেমন তোমার তেমনি আমার। তাই কবি বলছেন: আমি যে দুঃখ পাচ্ছি তাতে তুমি লজ্জ। কোরো না, প্রভু।—

প্রেমের পত্নী তোমার আমি,
আমার কাছে লাজ কী, স্বামী!
তোমার সকল ব্যথার ব্যথী আমায়
কোরো নিশিদিন।
নিদ্রা নাহি চক্ষে তব,
আমিই কেন ঘুমিয়ে রব!
বিশ্ব তোমার বিরাট গেহ,
আমিও বিশ্বে লীন।

 ভোগের সুখ তো আমি চাই নে— যারা দাসী তাদের সেই সুখের বেতন দিয়ো। আমি যে তোমার পত্নী—আমি তোমার বিশ্বের সমস্ত দুঃখের ভার তোমার সঙ্গে বহন করব। সেই দুঃখের ভিতর দিয়েই সেই দুঃখকে উত্তীর্ণ হব। আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ অখণ্ড মিলনে সম্পূর্ণ হবে। সেইজন্যেই, আমি বলছি নে ‘আমাকে সুখ দাও’; আমি বলছি: আবিরাবীর্ম এধি। হে প্রকাশ, আমার মধ্যে তুমি প্রকাশিত হও।—

আমি তোমার ধর্মপত্নী, ভোগের দাসী নহি।
আমার কাছে লাজ কী স্বামী, নিষ্কপটে কহি।

২০৯