শান্তিনিকেতন ডেকেছেন, অনাদি কালের সেই আহবান ধ্বনিত হচ্ছে, কিন্তু র্তার ছেলেমেয়েদের ঘুম ভাঙে নি। তারা কেউ বা উদাসীন, কারও বা কাজ আছে, কেউ বা উপহাস করছে, কাউকে বা অভ্যাসের আবরণ কঠিন করে ঘিরে আছে। তারা সংসারের কোলাহল শুনেছে, স্বার্থের আহবান শুনেছে, প্রতি দিনের প্রয়োজনের ডাক শুনেছে, কিন্তু আকাশের আলোকের ভিতরে আনন্দময়ের আনন্দভবনে উৎসবের আমন্ত্রণের আহবান শুনতে পায় নি। প্রেমিকের ডাক প্রেমাস্পদের কাছে আসছে, মাঝখানে কত ব্যবধান! কত অবিশ্বাস, কত কলুষ, কত মোহ, কত বাধা ! উৎসবের নহবত প্রভাতে প্রভাতে বাজছে, তারায় তারায় অন্ধকারের হৃদয় ভেদ করে বাজছে । সেই উৎসবলোকে ফুল ফুটছে, পাখি গান করছে, শু্যামল তৃণের আস্তরণ পাতা হয়েছে, তার মালীরা ফুলের মালা গেঁথে ঝুলিয়ে রেখেছে— কিন্তু, এতই ব্যবধান সেখানকার সংগীতকে এখানে আমাদের কাছে পৌছতে দিচ্ছে না । সেইজন্যই তিনি যে সৌন্দর্যের সংগীত বাজাচ্ছেন তার মধ্যে আমন কান্না রয়েছে। পৌছল না, সবাই এসে জুটল না, আনন্দসভা শূন্য পড়ে রইল। জগতের সৌন্দর্যের বুকের মধ্যে এই কান্না বাজছে । ফুল ফুটতে ফুটতে ঝরতে ঝরতে কত কান্নাই কাদল ; সে বললে, “যে প্রেমলিপি আমি আনলুম সে লিপিখানি কেউ পড়ল না ।” নদীর কলম্রোতে নির্জন পর্বতশিখর থেকে যে সংগীতকে বহন করে সমুদ্রের দিকে চলেছে, সেই স্বরে কান্না রয়েছে, ‘আমি যে নির্জন থেকে নির্জনের দিকে চলেছি, সেই নির্জনের স্বর গ্রামে গ্রামে লোকালয়ে ঘোষণা করেছি— কারও সময় হল না সে আহবান শুনবার ।" আকাশের WoOo.
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৯
অবয়ব