শান্তিনিকেতন সেটুকু গ্রহণ করে তবেই সে শিখা জলবে— তবেই উৎসব হবে। যদি তা না হয়, যদি কেবল দস্তুর রক্ষা করা হয়, এ যদি কেবল পঞ্জিকার জিনিস হয়, তবে সমস্ত অন্ধকার ; এখানে একটি দীপও তবে জলে নি । সেইজন্য বলছি এ দলের উৎসব নয়, এ হৃদয়ের ভিতরকার ভক্তির উৎসব । আমরা লোক ডেকে আলো জালাতে পারি, কিন্তু লোৰু ডেকে তো স্বধারসের উৎসকে উৎসারিত করতে পারি না। যদি আজ কোনো জায়গায় ভক্তের কোনো-একটি আসন পাতা হয়ে থাকে, এ সভার প্রাস্তে যদি ভক্তের হৃদয় জেগে থাকে, তবেই সার্থক হয়েছে এই প্রদীপ জ্বালা ; সার্থক হয়েছে এই সংগীতের ধ্বনি, এই-সমস্ত উৎসবের আয়োজন। এ উৎসব যাত্রীর উৎসব । আমরা বিশ্বযাত্রী, পথের ধারের কোনো পান্থশালাতে আমরা বদ্ধ নই। কোনো বাধা মতামতের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে দাড়িয়ে থেকে উৎসব হয় না— চলার পথে উৎসব, চলতে চলতে উৎসব। এ উৎসব কবে আরম্ভ হয়েছে ? যেদিন এই পৃথিবীতে মায়ের কোলে জন্মগ্রহণ করেছি সেই দিন থেকে এই আনন্দ-উৎসবের আমন্ত্রণ পৌচেছে— সেই আহবানে সেই দিন থেকে পথে বেরিয়েছি। সেই যাত্রীর সঙ্গে সেই দিন থেকে তুমি যে সহযাত্রী, তাই তো যাত্রীর উৎসব জমেছে। মনে হয়েছিল যে পথে চলছি সে সংসারের পথ ; তার মাঝে সংসার, তার শেষে সংসার ; তার লক্ষ্য ধনমান, তার অবসান মৃত্যুতে। কিন্তু, না, পথ তো কোথাও ঠেকে না; সমস্তকেই যে ছাড়িয়ে যায়। তুমি সহযাত্রী, তার দক্ষিণ হাত ধরে কত সংকটের মধ্য দিয়ে, সংশয়ের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের ভিতর দিয়ে, তাকে পাশে নিয়ে চলেইছ ; কোনো-কিছুতে এসে থামতে দাও নি । সে বিন্দ্রপ W94 R.
পাতা:শান্তিনিকেতন (দ্বিতীয় খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৩
অবয়ব