পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

 কিছুদিনের মধ্যেই আমার ধারণা সত্যে পরিণত হইল। হরিমতি যখন দেখিল মুখের কথায় শাসাইয়া আমাকে জব্দ করিতে পারিল না, তখন সে পাড়াময় আমার বদনাম রটাইতে লাগিল। কথা ক্রমশঃ বাবার কাণে উঠিল, তিনি বিশ্বাস করিলেন না। তিনি সংবাদ-দাতাকে বলিলেন, “আমাদের দেশের মেয়েরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করিলে অমনি সাধারণ লোক নানা মিথ্যা কলঙ্কের কথা রটায়। কারণ―এদেশে স্ত্রী-স্বাধীনতা চলিত নহে।”

 আমার জেদ বাড়িয়া উঠিল। মুকুল দাদা আমাকে একদিন কথা প্রসঙ্গে বলিয়াছিলেন, “প্রেমের পথে যতই বাধা বিঘ্ন আসে, ততই উহা প্রবল হয়।” ইহার প্রমাণ আমি আমার হৃদয়ের মধ্যে পাইতে লাগিলাম।

 আমার প্রথম যৌবনের উদ্দাম আকাঙ্খা প্রাণের মধ্যে জাগিয়া উঠিবার সঙ্গে সঙ্গে সম্মুখে দেখিলাম দুইটী যুবক―মুকুল ও রমেশ। প্রকৃতির নিয়মে ইহাদের দিকে প্রবৃত্তির প্রবাহ প্রবল বেগে ছুটিল। আমাকে টানিয়া রাখিবার জন্য শাসন, মাতৃস্নেহ, আদর-যত্ন ছিল না। আজ মনে হয়, আমার মা বাঁচিয়া থাকিলে হয়ত এ-পথে আসিতাম না। আমার বাবা যদি একদিনও একটু আদর করে আমার দিকে মুখ তুলিয়া চাহিতেন, অথবা শাসন করিতেন তবে বোধ হয় এ জীবনের গতি ফিরিয়া যাইত।

 মুকুলদা একটু ভীরু স্বভাব। রমেশ-দা ছিল সাহসী ও বেপরোয়া। একদিন দুপুর বেলা বাবা বৈঠকখানা ঘরে বসিয়া পড়িতেছিলেন। আমাদের স্কুল ছুটি। আফিসও বন্ধ। রমেশ-দা আসিয়া বাবাকে জিজ্ঞাসা করিলেন “কাকাবাবু, মানী কোথায়?”