পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কানাড়ায় মারাঠা-প্রভাব
১৮৯

বিলম্বে তিনি এই কার্য্যে আংশিক মাত্র সফল হন। পশ্চিম-কানাড়ার অধিত্যকায় দুইটি বড় হিন্দু রাজ্য ছিল,—বিদনুর এবং সোন্দা। ১৬৬৩ সালে বিজাপুরী সুলতানের আক্রমণে বিদনুরের রাজা কাবু হইয়া পড়েন এবং ৩৫ লক্ষ টাকা নজর দিতে বাধ্য হন। তাহার পব প্রায়ই বিজাপুরী সৈন্য এই দেশে ঢুকিত, এখন মারাঠারাও সেই পথ ধরিল। রুস্তম-ই-জমান শিবাজীর বংশের দুপুরুষের বন্ধু, তিনি কখনও মারাঠাদের বিরুদ্ধে লাগিয়া পড়িয়া যুদ্ধ করিতেন না, বাহিরে লড়াই-এর ভাব দেখাইয়া সুলতানকে ভুলাইতেন মাত্র। একথা দেশের সকলে, এমন কি ইংরাজ-কুঠীর সাহেবেরাও জানিত।

ঘোরপডে-উচ্ছেদ এবং সাবস্ত-বাড়ী অধিকার

 ১৬৬৪ সালের এপ্রিল মাসে বিজাপুরী ওমরারা আবার বিদনুর আক্রমণ করিল কারণ, সেখানে রাজপরিবার-মধ্যে কলহ ও খুনোখুনি আরম্ভ হইয়াছিল। সেই সুযোগে শিবাজী ঐ বৎসরের কয়েক মাস যাবৎ এই প্রদেশের ভিতর দিয়া ইচ্ছামত দেশলুঠ ও নগর-অধিকার করিয়া ঘুরিতে লাগিলেন। অক্টোবব ও নবেম্বর মাসে বহলোল খাঁর সহিত তাঁহার দুইবার যুদ্ধ হয়;প্রথমটায় তাঁহার হার, এবং দ্বিতীয়টায় জিত হয়। এই সময় তিনি মুদহোল গ্রাম আক্রমণ করিয়া তথাকার জমিদার ঘোরপডে বংশ প্রায় নির্ম্মূল করিয়া দেন। মারাঠ প্রবাদ এই যে, যখন (১৬৪৮ সালে) বিজাপুরী উজীর জিঞ্জির নিকট শাহজীকে কয়েদ করেন, তখন বাজী ঘোরপড়ে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া শাহজীর পলায়নে বাধা দিয়া তাহাকে ধরাইয়া দেয়, এবং সে জন্য শাহজী শিবাজীকে পত্র লেখেন—“যদি তুমি আমার পুত্র হও, তবে এই দুষ্কার্য্যের জন্য ঘোরপড়ের উপর প্রতিহিংসা লইও।” কিন্তু এই গল্প বিশ্বাসের অযোগ্য, কারণ মুদহোল-জয়ের দশ মাস আগে শাহজীর মৃত্যু হইয়াছিল।