পাতা:শিশু-ভারতী - পঞ্চম খণ্ড.djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস অামাদের দেশে কবিতার যে ধারা বহাইয়া দিয়া গিযাছেন, তাহার নাম বৈষ্ণব-সাহিত্য । আমাদের সাহিত্যের ইহা অতি গৌরবের বস্তু ; এত অধিক গৌরবের বস্তু যে, অনেকে বলেন, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য বলিলে বৈষ্ণব-সাহিতাই বুঝা যায । রাধাকৃষ্ণকে আশ্রয় করিয়া ইহা গড়িয়া উঠে । তাহাদের মিলন-বিরহ, পুর্বরাগ, মান-অভিমান ইত্যাদি ভাব বৈষ্ণব কবিদের অমর ভাষায় এমনভাবে ফুটিয়া উঠিয়াছে যে, পৃথিবীতে কোথাও তাঙ্গার তুলনা নাই। তাহার ছন্দ, তাহার কথা, তাহার ভাব সকলই অতুলনীয়। এই বৈষ্ণব-সাহিত্য বহু সাধক, বহু বৈষ্ণব রচনা করিয়া গিয়াছেন— গোবিন্দ দাস, জ্ঞান দাস, যদুনন্দন—কত জনের নাম করিব? বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাহাদের নাম উজ্জ্বল-জগতের সাহিত্যের ইতিহাসেও বুঝি তাহারা স্নান নহেন। র্তাহাদের রচনার বিষয় যেমন এক,— রাধাকৃষ্ণকে অবলম্বন করিয়াই,—তেমনি আবার ভাষাও অনেকটা এক ছিল । তাঙ্গার ব্রজবুলিতে রচনা করিতেন । এই ব্রজবুলি সাধারণ ভাষা ছিল না ; আমরা এখনও এই কথ। বলিয়া থাকি যে, পষ্ঠের ও গদ্যের ভাষা এক নহে,— গদ্যের কথা আটপৌরে, প্রয়োজনের ভাষা, আর পদ্য হইল সখের, কল্পনার বস্তু—সুতরাং তাহার ভাষা অন্য রকম হইবেই। তাই তাহারা এক মিশানো ভাষায় কবিতা রচনা করেন, সে ভাষার নাম ব্রজবুলি। এই ব্রজবুলির উৎপত্তি কোথায়, তাহা লইয়া সকলে যে একমত হইতে পারিয়াছেন, এমন নহে । কেহ কেহ বলেন, ইহা ব্রজের বুলি, কেহ বা বলেন, ইহা হিন্দি মেশানো বাংলা, আবার অনেকে বলেন, ইহার ভিত্তি এদেশে প্রচলিত মিথিল ও প্রাকৃতের উপর। খুব কম । হইলেও চারিশত বৎসর ধরিয়া বাঙ্গালী বৈষ্ণব-কবির। এই ভাষাযই কবিতা রচনা করিয়া অভ্যাসিতেছেন। রবীন্দ্রনাথ এই ব্ৰজবুলিরই সাহায্যেৰ্তাহার অল্প বয়সে কতকগুলি কবিতা লিখেন—তাহাদের নাম দেন “ভামুসিংহের পদাবলী।” “তোমার স্থানে “তুয়া” “সেবিলাম” স্থানে "সেবলু” “পান করিলাম” স্থানে “পিয়লু” “সন্ধ্যাবেল” না বলিয়। “সাজ বেরী” “অঙ্গে” না বলিয়া “অঙ্গহি”—