পাতা:শুভদা - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

yoʻq চতুৰ্দশ পরিচ্ছেদ চক্ৰবৰ্ত্তী। পাড়ার পাঁচ জন দেখে-শুভদা ঘাট হইতে স্নান করিয়া যাইতেছে, জলের কলসী কঁাকে লইয়া ধীর মন্থর গমনে চলিয়া যাইতেছে, গৃহকৰ্ম্ম করিতেছে-কিন্তু নিত্য ক্ষীণ, নিত্য বিষাদময়ী ! বর্ষীয়সীরা বলে, ছুড়ি আর বঁাচবে না-আহ ! সমবয়সিনীরা বলে, এমন অদৃষ্ট যেন শত্রুরও না হয়—আহা ! পিছনে ‘আহা আহাঁ” সবাই বলেকিন্তু সম্মুখে একথা বলিতে তাহাদের লজ্জা বোধ হয়। সকলেই যেন বুঝিতে পারে, এ “আহাটা শুভদার সম্বন্ধে খাটে না। আর একটা অন্য কিছু-যাহা জগতে নাই, যাহা এ পৰ্য্যন্ত কেহ কখন প্রয়োগ করে নাই-প্ৰয়োগ করিবার অবকাশও আসে নাই-এমন একটা শব্দ খুজিয়া পাইলে যেন বলিবার মত কতকটা হয়। তাহা কেহ কিছু বলে না-শুভদা আসিলে চুপ করিয়া থাকে। স্নান করিবার সময় গঙ্গার ঘাটে ছেলেমেয়েরা জল ছিটায়, গোলমাল করে, হাস্য কলরবে প্রৌঢ়াদিগের শিবপূজার মন্ত্র ভুলাইয়া দেয়, এমনি অনেক উৎপাত করিতে থাকে, কিন্তু শুভদা যখন নিঃশব্দে ঘাটের সর্বশেষ প্রান্তে কলসী নামাইয়া নিতান্ত অস্পশায়া নীচ জাতিয়ার ন্যায় সসঙ্কোচে জলে নামে, তখন বালকবালিকারাও বুঝিতে পারে যে, এখন আর গোলমাল করিতে নাই, জল ছিটাইতে নাই-এখন চুপ করিয়া শান্তশিষ্ট হইয়া জননীর বা আর কাহারো আপনার লোকের অঞ্চল ধরিয়া দাড়াইতে হয়। সে চলিয়া যায়, তখনও কিন্তু তাহারা পূৰ্ব্বভাব শীঘ্ৰ ফিরিয়া পায় না। শুভদা হাসিতে ভুলিয়া গিয়াছে, দুঃখ করিতে ভুলিয়া গিয়াছে। কঁদিতে তাহার বিরক্তি বোধ হয়, সে সব পুরাতন কথা আলোচনা করিতে লজ্জা করে। বাড়িটা আজকাল সম্পূর্ণ নির্জন হইয়াছে ; ছলনা শ্বশুরবাড়ি গিয়াছে, রাসমণি প্রায় সমস্ত দিন বাটী আসেন না, আর হারাণ মুখুয্যে ! তা সে আজকাল ভাল ছেলে হইয়াছে। নিত্য দুবেল বাটী