পাতা:শেষের কবিতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অদ্ভুত-ধরনে-কাপড় পরা গবর্নেস! মুখে মাখন দিলে গলে না, যেন একতাল ভিজে ন্যাকড়া; কাছে বসলে মনটাতে বাদলার বিস্কুটের মধ্যে ছাতা পড়ে যায়। কী করে অমিট ওকে এক মোমেণ্টও সহ্য করে।

 ‘সিসি, তোমার দাদার মনটা চিরদিন উপরে পা ক'রে হাঁটে। কোন্ এক সৃষ্টিছাড়া উল্টো বুদ্ধিতে এই মেয়েটাকে হঠাৎ মনে হয়েছে এঞ্জেল।' এই বলে টেবিলে অ্যাল্‌জেব্রার বইয়ের গায়ে সিগারেটটা ঠেকিয়ে রেখে কেটি ওর রুপোর-শিকল-ওয়ালা প্রসাধনের থলি বের করে মুখে একটুখানি পাউডার লাগালে, অঞ্জনের পেন্‌সিল নিয়ে ভুরুর রেখাটা একটু ফুটিয়ে তুললে।

 দাদার কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় সিসির যথেষ্ট রাগ হয় না, এমন-কি ভিতরে ভিতরে একটু যেন স্নেহই হয়। সমস্ত রাগটা পড়ে পুরুষদের মুগ্ধনয়নবিহারিণী মেকি এঞ্জেলদের 'পরে। দাদা সম্বন্ধে সিসির এই সকৌতুক ঔদাসীন্যে কেটির ধৈর্যভঙ্গ হয়। খুব করে ঝাঁকানি দিয়ে নিতে ইচ্ছে করে।

 এমন সময়ে সাদা গরদের শাড়ি প'রে যোগমায়া বেরিয়ে এলেন। লাবণ্য এল না। কেটির সঙ্গে এসেছিল ঝাঁঁকড়া-চুলে-দুইচোখ-আচ্ছন্নপ্রায় ক্ষুদ্রকায়া ট্যাবি-নাম-ধারী কুকুর। সে একবার ঘ্রাণের দ্বারা লাবণ্য ও সুরমার পরিচয় গ্রহণ করেছে। যোগমায়াকে দেখে হঠাৎ কুকুরটার মনে কিছু উৎসাহ জন্মালো। তাড়াতাড়ি গিয়ে সামনের দুটো পা দিয়ে যোগমায়ার নির্মল

১৫৫