পাতা:শেষ লীলা - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
দারোগার দপ্তর, ৭৮ম সংখ্যা।

 “মহাশয়! এখন ত জানিতে পারিলেন যে, রাজকুমারীকে কে হত্যা করিয়াছে। এখন ত আপনি আপনি বুঝিতে পারিলেন যে, এই হত্যাকাণ্ডের কিছুই হরি অবগত নহে। এখন আপনি হরিকে অব্যাহতি প্রদান করুন। নির্দ্দোষ হরিকে আর কষ্ট দিবেন না। এ খুন হরি করে নাই, হরির এ কার্য্য করিবার ক্ষমতাও নাই। বাড়ীর সকলে মিথ্যা কথা বলিয়া হরির সর্ব্বনাশ করিতে বসিয়াছে। এই মহাপাপের নায়িকা আমি। আমার দ্বারাই এই মহাপাপ সম্পাদিত হইয়াছে। আমিই রাজকুমারীকে হত্যা করিয়াছি। এই মহাপাপের নিমিত্ত যে দণ্ড আপনারা আমার উপর বিধান করিবেন, আমি সেই দণ্ড গ্রহণ করিতে সম্মত আছি।

 “মহাশয়। আমি যে সকল কথা আপনাদিগের নিকট স্বীকার করিলাম, তাহা আমি এ পর্য্যন্ত স্বীকার করিয়াছিলাম না, এবং কখনও করিতাম না; কিন্তু হরির উপর যেরূপ প্রমাণ সংগ্রহ হইয়াছে, দেখিতে পাইতেছি, গহনা পাওয়া যাউক, আর না যাউক, তাহার ফাঁসি নিশ্চয়। এই ব্যাপার দেখিয়া আমার প্রাণ হু হু করিয়া কাঁদিয়া উঠিতেছে! আমার পাপে নির্দ্দোষ হরির প্রাণ যায় দেখিয়া, মন একবারে অধীর হইয়া পড়িতেছে। প্রবল পুত্ত্রস্নেহ আসিয়া আমার মন অধিকার করিতেছে। পূর্ব্বে আমার যেরূপ মনের গতি ছিল, এখন আর তাহা নাই, উহা একবারে পরিবর্ত্তিত হইয়া পড়িতেছে। হরির প্রাণ অপেক্ষা এখন আমার প্রাণকে নিতান্ত তুচ্ছ জ্ঞান করিতেছি। তাই আপনাকে বলিতেছি, যখন আপনি প্রকৃত দোষীকে প্রাপ্ত হইয়াছেন, তখন হরিকে আর নিরর্থক কষ্ট প্রদান করিতেছেন কেন? আমার সম্মুখে তাহাকে মুক্তি প্রদান করুন। তাহার কষ্ট আর ক্ষণমাত্রও দেখিতে পারিতেছি না!”