পাতা:শ্রীকান্ত - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

वैज्ञां Σ Σ Α. এতবড় ভাঙন ধরিয়েছে--সেই ফাটল জোড়া দিবার মত হৃদয় ও কৌশল যাহার আছে তাহার মত শিল্পী আর আছে কোথায় ? এই উদ্দেশ্যে কতদিন হইতেই না সে গোপনে উদ্যোগ করিয়া আসিতেছে! একান্ত-মনে আশীৰ্ব্বাদ করিলাম, এই সদিচ্ছা যেন তাহার পূর্ণ হয়। কিছুদিন হইতে আমার অন্তরের মধ্যে নিভৃতে যে ভার সঞ্চিত হইয়া উঠিতেছিল তাহার অনেকখানি হাল্কা হইয়া গিয়া আজিকার দিনটা আমার বড় ভাল কাটিল। কোন শাস্ত্রীয় ব্রত রাজলক্ষ্মী নিয়াছে জানি না, কিন্তু আজ তাহার তিন দিনের মিয়াদ পূৰ্ণ হইয়া কাল আবার দেখা হইবে, এ কথাটা বহুদিন পরে আবার নুতন করিয়া স্মরণ হইল। পরদিন সকালে রাজলক্ষ্মী আসিতে পারিল না; কিন্তু অনেক দুঃখ করিয়া রতনের মুখে খবর পাঠাইল যে, এমনি অদৃষ্ট একবার দেখা করিয়া যাইবারও সময় নাই।--দিন-ক্ষণ উত্তীর্ণ হইয়া যাইবে । নিকটে কোথায় বক্ৰেশ্বর বলিয়া তীৰ্থ আছে, সেখানে জাগ্ৰত দেবতা এবং গরম জলের কুণ্ড আছে, তাহাতে অবগাহন স্নান করিলে শুধু সে-ই নয়, তাহার পিতৃকুল মাতৃকুল ও শ্বশুরকুলের তিনকোটি জন্মের যে যেখানে আছে সবাই উদ্ধার হইয়া যাইবে। সঙ্গী জুটিয়াছে, দ্বারে গরুর গাড়ী প্ৰস্তুত, যাত্র-ক্ষণ প্ৰত্যাসন্নপ্ৰায় । দু-একটা অত্যাবশ্যকীয় বস্তু দরওয়ানের হাত দিয়া রতন পাঠাইয়া দিল, সে বেচারা উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া দিতে গেল। শুনিলাম ফিরিয়া আসিতে পাঁচ-সাত দিন বিলম্ব হইবে। আরও পাঁচ-সাত দিন ! বোধ করি অভ্যাসবশতই হইবে, আজ তাহাকে দেখিবার জন্য মনে মনে উন্মুখ হইয়া উঠিয়াছিলাম ; কিন্তু রতনের মুখে অকস্মাৎ তাহার তীর্থযাত্রার সংবাদ পাইয়া নিরাশার অভিমান বা ক্রোধের পরিবর্তে বুকের মধ্যেটা আমার সহসা করুণা ও ব্যথায় ভরিয়া উঠিল। পিয়ারী সত্য-সত্যই নিঃশেষ হইয়া মরিয়াছে এবং তাহারই কৃতকৰ্ম্মের দুঃসহ ভারে আজ রাজলক্ষ্মীর সর্বদেহ-মনে যে বেদনার আৰ্ত্তিনাদ উচ্ছসিত হইয়া উঠিয়াছে তাহাকে সম্বরণ করিবার পথ সে খুজিয়া পাইতেছে না। এই যে অশ্ৰান্ত বিক্ষোভ, নিজের জীবন হইতে দুটিয়া । বাহির হইবার এই যে দিবিহীন ব্যাকুলত ইহার কি কোন শেষ নাই