পাতা:শ্রীশ্রীগৌরসুন্দর - শ্যামলাল গোস্বামি.pdf/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS8 * শ্ৰীশ্ৰীগৌরমুন্দর ধিনি কালবশে বিলুপ্ত নিজ ভক্তিযোগ প্ৰকাশ করিবার নিমিত্ত শ্ৰীকৃষ্ণচৈতন্যনাম ধারণপূর্বক আবিভূতি হইয়াছেন, আমার চিত্তভ্রমর তাহার চরণারবিন্দে গাঢ় রূপে লীন হউক । আর একদিন ভট্টাচাৰ্য্য প্ৰভুকে নমস্কার করিয়া ব্ৰহ্মস্তবের অন্তৰ্গত “তত্তেহীনুকম্পাং সুসমীক্ষ্যমাণে ভুঞ্জান এবাত্মকৃতং বিপাকম। হৃদবাশ্বিপুৰ্ভির্বিদধন্নমস্তে জীবেত যে ভক্তিপদে স দায়ভাক ৷” ভ্যা ১১।১৪৮ এই শ্লোকটি পাঠ করিলেন। প্ৰভু শ্লোক শুনিয়া বলিলেন, “ভট্টাচাৰ্য্য, ঐ শ্লোকের ‘মুক্তিপদে’ স্থানে ‘ভক্তিপ্তদে’ পাঠ করিলেন কেন ?” ভট্টাচাৰ্য্য বলিলেন,-“যিনি একমাত্র তোমার কৃপার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া আত্মকৃত কৰ্ম্মের ফলভোগ করিতে করিতে কায়মনোবাক্যে তোমাকে নমস্কার করিয়া জীবনধারণ করেন, তিনি অবশ্য দায়াধিকার স্বরূপে তোমাতে প্ৰেমই লাভ করিয়া থাকেন। সেই ব্যক্তি কখনই মুক্তিকে অঙ্গীকার করেন না, পরন্তু ঘূণাই করিয়া থাকেন। এই ভাবিয়াই আমি “মুক্তিপদে’ স্থলে ‘ভক্তিপদে’ পাঠ করিয়াছি।” প্ৰভু বলিলেন,-“মুক্তিপদ শব্দের অর্থ ঈশ্বর ; কারণ, মুক্তি র্তাহার পদে থাকে ; অথবা, মুক্তিপদ শব্দের অর্থ মুক্তির আশ্ৰয়, এই অর্থেও ঈশ্বরকেই বোধ করায় ; অতএব পাঠ পরিবর্তনের কোন প্ৰয়োজন দেখা যায় না।” ভট্টাচাৰ্য্য বলিলেন, “যদিও মুক্তিপদ শব্দের কথিত অৰ্থও করা যাইতে পারে সত্য, কিন্তু মুক্তিশব্দের রূঢ়ার্থ সাযুজ্যই, ঐ সাযুজ্য ভক্তের ঘূণ্য বস্তু, অতএব পাঠপরিবর্তনই উচিত বোধ হইতেছে।” প্ৰভু শুনিয়া আনন্দিত হইলেন। যিনি মায়াবাদের নিতান্ত পক্ষপাতী ছিলেন, সেই ভট্টাচাৰ্য্যের ঈদৃশ ভক্তিপক্ষপাত শ্ৰীচৈতন্যেরই প্ৰসাদের ফল। সার্বভৌম ভট্টাচাৰ্য্যের বৈষ্ণবতা দেখিয়া ক্ষেত্ৰবাসী বৈষ্ণবগণ মহাপ্ৰতুকে সাক্ষাৎ শ্ৰীভগবান বলিয়াই স্থির করিলেন। কাশীমিশ্র প্রভৃতি নীলাচলবাসী বৈষ্ণবগণ ক্রমে ক্ৰমে প্রভুর চরণে শরণাগত হইলেন ।