পাতা:শ্রীশ্রীগৌরসুন্দর - শ্যামলাল গোস্বামি.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sv শ্ৰীশ্ৰীগৌরসুন্দর এই কথা বলিয়া জগন্নাথ মিশ্র নিজের সঙ্কল্পটি কাৰ্য্যে পরিণত করিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গের বিদ্যাচর্চা রহিত করিয়া দেওয়া হইল। এই সময়ে একদিন শ্ৰীগৌরাঙ্গ নৈবেদ্যের তাম্বুল ভক্ষণ • করিয়া মূৰ্ছিত হইলেন। জনকজননী পুত্রের এইপ্ৰকার মূৰ্ছিাবস্থা আরও অনেকবার প্রত্যক্ষ করিয়াছিলেন বলিয়া বিশেষ ভীত হইলেন না । কিয়ৎক্ষণ শুশ্ৰষার পর শ্ৰীগৌরাঙ্গ সংজ্ঞালাভ করিয়া বলিলেন,-“মাতঃ একটি কথা শুনুন। দাদা আসিয়া আমাকে লইয়া গিয়া বলিলেন, তুমিও আমার মত সন্ন্যাসী হও । আমি বলিলাম, আমি বালক, এখন সন্ন্যাস করিলে কি হইবে ? আমি গৃহে থাকিয়া পিতামাতার সেবা করিব, তাহা হইলে, লক্ষ্মীনারায়ণ আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকিবেন। এই কথা শুনিয়া দাদা বলিলেন,-তবে তুমি গৃহে যাও, গৃহে যাইয়া পিতামাতাকে আমার প্রণাম জানাইও।” পুত্রের বাক্য শ্রবণ করিয়া জনকজননী জ্যেষ্ঠপুত্রের সংবাদপ্রাপ্তিতে এবং পুত্ৰ এখনও তাহাদিগকে ভুলেন নাই এই জ্ঞানে হৰ্ষান্বিত হইলেন। কিন্তু কালে শ্ৰীগৌরাঙ্গও পাছে সন্ন্যাসী হন ভাবিয়া তাহাদিগের হৃদয়ে ভয়েরও সঞ্চার হইল। শচীদেবী এই বিষয়টি শীঘ্রই তুলিয়া গেলেন ; মিশ্র কিন্তু উহা ভুলিলেন না। পুত্রের বিদ্যাভ্যাস স্থগিত করার সম্বন্ধে তাহার মত আরও দৃঢ় হইল। তাহার মত এইরূপে দৃঢ়তর হইয়াও স্থায়ী হইতে পারিল না । তিনি অধিক দিন ঐ মত পোষণ করিতে পারিলেন না। বালকক্সপী শ্ৰীহরি পিতার মত পরিবর্তনের অভিলাষে ছল করিয়া পুনর্বার পূর্বাপেক্ষা অধিকতর চাঞ্চল্য প্ৰকাশ করিতে আরম্ভ করিলেন। কখন গরু সাজিয়া গৃহস্থের গাছ-পালা নষ্ট করিয়া দিয়া, কখন কাহারও গৃহদ্বার বাহির হইতে রুদ্ধ করিয়া দিয়া পলায়ন করিতে লাগিলেন। তিনি এইরূপ বালম্বভাবসুলভ, লোকবেদবিরুদ্ধ কাৰ্য্য সকল অনুষ্ঠান করিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন। একদিন তিনি উচ্ছিষ্টগর্তে ত্যক্ত হঁাড়ির উপর আসন করিয়া বসিয়া রছিলেন । সর্বাঙ্গে হাড়ির কালি লাগিয়া গেল । শচীদেবী দেখিয়া তেঁাহাকে ধরিয়া স্নান করাইয়া দিলেন এবং অস্পৃশ্য হাড়ি স্পর্শ করার নিমিত্ত অনেক তিরস্কার করিতে লাগিলেন। শ্ৰীগৌরাঙ্গ তখন ব্ৰহ্মজ্ঞানীর ন্যায় গম্ভীরভাবে বলিলেন,-“আমি কি অনুচিত কৰ্ম্ম করিয়াছি ? এজগতে উচ্ছিষ্ট বা অনুচ্ছিষ্ট কিছুই নাই। ইহা পবিত্র, ইহা অপবিত্র, কেবল মনে । বস্তুতঃ পবিত্র বা অপবিত্র বলিয়া কোন সামগ্ৰী নাই। সকলই মায়াময়, সকলই একই প্ৰকৃতির বিকার। বিশেষতঃ এসংসারে এমন বস্তুই থাকিতে পারে না, যাহাতে