ক্রমেই বাড়ান হরি নীচ জন মান।
তৃণাদপি শ্লোক তার আছয়ে প্রমাণ।।
রাখালের এঁঠো খায় কিবা সখ্য ভাব।
বিদুরের খুদ খায় শুদ্ধ প্রেম ভাব।।
শচীগর্ভ সিন্ধু মাঝে ইন্দু পরকাশ।
হবিউল্লা কাজী পুত্র ব্রহ্ম হরিদাস।।
নরোত্তম করিয়াছে বৈষ্ণব বন্দনা।
কালিদাসে দেখায়েছে তাহার নিশানা।।
কায়স্থ কুলেতে জন্ম রায় রামানন্দ।
তার ঠাই কৃষ্ণ প্রেম পাইয়া আনন্দ।।
যুগল মধুর প্রেম করিল প্রকাশ।
রঘুনাথের খুল্লতাত নাম কালীদাস।।
বন্দী সেই কালীদাস রঘুনাথের খুড়া।
বৈষ্ণবের উচ্ছিষ্ট খাইয়া সেই বুড়া।।
বৈষ্ণবের শিরোমণি ঝড়ু ভুঁইমালী।
যে পথে হাটিতে কালীদাস মাখে ধুলি।।
উচ্ছিষ্ট খাইতে সাধু পালাইয়া রয়।
ঝড়ুর রমণী যবে উচ্ছিষ্ট ফেলায়।।
কলার ডোঙ্গায় সাধু পেয়ে আম্র আটি।
বৈষ্ণব প্রসাদ বলে করে চাটাচাটি।।
প্রভুর নিকটে গিয়ে বলে হরিবোল।
অন্তর্য্যামী মহাপ্রভু ধ’রে দিল কোল।।
অদ্য হ’লে বৈষ্ণবের প্রসাদ ভাজন।
তুমি কালীদাস মোর জীবনের জীবন।।
ব্রহ্মবংশে জন্মিয়া গৌরাঙ্গ ভগবান।
যবন ব্রাহ্মণ সব করিলা সমান।।
রায় রামানন্দে বলে প্রতিজ্ঞা করিয়া।
কর্ম্মী জ্ঞানী মাতাইব নীচ শূদ্র দিয়া।।
বাদশাহের উজির ছিল দুটি ভাই।
রামকেলী গ্রামে গেল গৌরাঙ্গের ঠাই।।
বাহু প্রসারিয়া প্রভু দিল আলিঙ্গন।
তারা বলে মোরা হই অস্পৃশ্য যবন।।
নীচ কুলে জন্ম মোরা করি নীচ কাজ।
মোদের স্পর্শিলা হরি লোকে দিবে লাজ।।
চৈতন্য চরিতামৃতে আছয়ে প্রকাশ।
সাকর মল্লিক আর নাম দাবির খাস।।
ভাগবতে নাম রূপ সাকর মল্লিক।
দাবির খাস সনাতন পরম নৈষ্ঠিক।।
প্রভু বলে যুগে যুগে ভক্ত দুইজন।
আজ হতে নাম হ’ল রূপ সনাতন।।
অবতার যখন হলেন শ্রীনিবাস।
নিত্যানন্দ হইলেন নরোত্তম দাস।।
কায়স্থ শ্রীকৃষ্ণানন্দ দত্ত খেতরিতে।
তার পুত্র নরোত্তম ব্যাক্ত এ জগতে।।
সেই নরোত্তম শিষ্য দুই মহামতি।
এক শাখা গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্ত্তী।।
আর শাখা চক্রবর্ত্তী রাম নারায়ণ।
শূদ্রের হইল শিষ্য দুজন ব্রাহ্মণ।।
কিবা শূদ্র কিবা ন্যাসী যোগী কেন নয়।
যেই জানে কৃষ্ণ তত্ত্ব সেই শ্রেষ্ঠ হয়।।
শ্লোক
ন শূদ্রা ভগবদ্ভক্তা স্তেহপি ভাগবতোত্তমাঃ
সর্ব্ববর্ণেষু তে শূদ্রা যে ন ভক্তা জনার্দ্দনে।।
অপিচ
চণ্ডালোহপি মুনিশ্রেষ্ঠ হরিভক্তিপরায়ণঃ
হরিভক্তিবিহীনশ্চ দ্বিজোহপি শ্বপচাধমঃ।।
পাষণ্ড দলনে আছে বহুত প্রমাণ
ভক্ত হ’লে প্রভু তার বাড়ান সম্মান।।
আর ত প্রমাণ এক রাম অবতারে।
রামকার্য্য করে সব ভল্লুক বানরে।।
কিবা জাতি কিবা কুল রাখাল ভুপাল।
শ্রীরামের মিত্র কপি রাক্ষস চণ্ডাল।।
নীচ কুল ভক্তিগুনে করিল পবিত্র।
এ লীলায় হৈল প্রভু যশোমন্ত পুত্র।।
কিসের রসিক ধর্ম্ম কিসের বাউল।
ধর্ম্ম যজে নৈষ্ঠিকেতে অটল আউল।।
সর্ব্ব ধর্ম্ম লঙ্ঘি এবে করিলেন স্থুল।
শুদ্ধ মানুষেতে আর্ত্তি এই হয় মূল।।
জীবে দয়া নামে রুচি মানুষেতে নিষ্ঠা।
ইহা ছাড়া আর যত সব ক্রিয়া ভ্রষ্টা।।
এই সূক্ষ্ম সনাতন ধর্ম্ম জানাইতে।
জনম লভিলা যশোমন্তের গৃহেতে।।
মুখে বল হরি হরি হাতে কর কাজ।
হরি বল দিন গেল বলে রসরাজ।।
পাতা:শ্রীশ্রীহরি লীলামৃত.djvu/২০
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।