পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[এগার] ব্যয় বহন করিতে সমর্থ হইব কি না, না ভাবিয়াই উহা প্রেসে পাঠাইয়া দিলাম। সেই সময় শ্রীহট্টের স্কুল সমূহের ডিপুটী ইনিসপেক্টর শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ এম. এ মহাশয়ের একখানা মুদ্রিত চিঠিতে জানিলাম যে তিনি শ্রীহট্টের ইতিহাস প্রকাশ কল্পে মাল মসলা সংগ্ৰহ করিতেছেন। তাহাকে দীপিকার কথা জানাইলাম এবং তিনি তৎক্ষণাৎ স্বসঙ্কল্পিত কাৰ্য্যে এ অযোগ্যকে ব্ৰতী করিলেন। দীপিকা আর মুদ্রিত হইল না,— সেই ক্ষুদ্র বৃক্ষের স্থলে “শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত" রূপ মহামহীরুহের উৎপত্তি হইল। তখন ততটা ভাবি নাই, এখন দেখিতেছি, এ গুরুতর ভারটা গ্রহণ না করাই ছিল সঙ্গত, তরুটি তাহা হইলে নিশ্চিত সুপুষ্ট ও সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর হইত। o কিসে কি হইয়া গেল; নিজের শক্তির প্রতি লক্ষ্য নাই- এ কার্য্যে সাধ্যায়ত্ত কি না বিচার নাই, বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ের আহবানের উন্মাদিনী শক্তির সম্মোহন গুণে বিমুগ্ধচিত্তে অপরিজ্ঞাত ও অনভ্যস্ত পথে পঙ্গু গিরিলঙ্ঘনে প্রভাবিত হইল- শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত বিরচিত হইতে আরম্ভ হইল । দেশের বহুকথা বিস্মৃতিগর্ভে বিলীন হইয়া গিয়াছে, যাহা অল্প কিছু এখনও শুনা যায় তাহাও বিস্মৃতির অন্ধকূপে চিরাবৃত না হউক, ইহাই এ কাৰ্য্যের প্রবৰ্ত্তনা। সামান্যই হউক, ইতিহাস নামের অযোগ্যই হউক এবং অজ্ঞতা-জনিত ভুলভ্রান্তি বহুলই হউক, একটা হইয়া গেলে, পরে যোগ্যতর হস্তে সে পথের আবৰ্জ্জনা দূর হইতে পারবে, ইহাই দুৰ্ব্বল চিত্তের সান্তুনা । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাদ্ধ (ভৌগোলিক বৃত্তান্ত ও ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত) রচিত হইল,মুদ্রণ ব্যয় বহন করিবে কে? তখন সেই মহাত্মা- যদিও তিনি ধনবান নহেন, কোন জমিদার সন্তান নহেন, কিন্তু সহৃদয়তা ও স্বদেশানুরাগ যাহাকে চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে দিল নাতিনিই নিজের কষ্টোপাৰ্জ্জিত অর্থ এই কার্যে ব্যয় দিতে প্রস্তুত হইলেন । যখন তিনি নিজে গ্রন্থ প্রণয়নে বৃত না হইয়া আপনার সংগৃহীত বিবরণাবলী লেখকের কাছে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন, তখনই শ্ৰীমহাপ্ৰভু ও নৈয়ায়িক শিরোমণি রঘুনাথের গ্রন্থপ্রণয়ন প্রসঙ্গ মনে জাগিয়াছিল। শ্ৰীমহাপ্রভুর ন্যায়শাস্ত্রের টীকা, রঘুনাথের দাধিতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইত, কিন্তু তিনি কবি-যশঃ প্রার্থী ছিলেন না “ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে । মম জন্মানি জগন্মনীশ্বরে ভবতাদ্ভক্তিরহৈতুকী তুয়ি"॥ ইহা শ্ৰীমহাপ্রভুর বাক্য; তাই তিনি নিজ সঙ্কল্প বিসৰ্জ্জন দিয়া রঘুনাথের নাম পুরাইয়াছিলেন। অধিকন্তু পদ্মনাথ বাবু গ্রন্থের মুদ্রণ ব্যয় বহনেও প্রস্তুত হইলেন। পবিত্র জাহ্নবী প্রবাহের মত তদীয় উদার হৃদয়ের বিমল ভাব লহরীর অনাবিলতা ও গভীরতা অনুভব করিয়া মোহিত হইলাম। পূৰ্ব্বাদ্ধ প্রেসে গেল, কলিকাতায় কয়েকবার যাতায়াত ও অবস্থানাদির ব্যয় সহ কিঞ্চিদূন ২৫০০ টাকা ব্যয়ে বৎসরাধিক কাল পরে প্রেসের লৌহ নিগড় হইতে গ্রন্থ বাহির হইল। বিদ্যাবিনোদ মহাশয় লাভের আশায় ইহার ব্যয় বহন করিয়াছিলেন মনে করিলে, ইহা নিতান্ত ভ্রম ও দুঃখের বিষয় হইবে; কারণ গ্রন্থ বিক্রয়ে যদি লাভ হইত, তাহা তিনি পাইতেন না, শুদ্ধ প্রদত্ত ব্যয়টা তিনি পাইবেন, ইহাই কথা ছিল । কিন্তু ব্যয়টাও তো আর তিনি এযাবৎ প্রাপ্ত হন নাই। এবং পাইবার আশাও আর নাই । ৯৮০ খণ্ড গ্রন্থের মধ্যে অনেক কপি পত্রিকা সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দিতে হইয়াছে; মোটে