পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম অধ্যায় : মোসলমান বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২১ কৃতিত্বের সহিত মওলানা উপাধি পাইয়াছিলেন। তাহার পুত্রের নাম শেখ আহমদ, তৎপুত্র ফতে মোহাম্মদ যে কেবল বিদ্যাৰ্জ্জনে মওলানা উপাধি পাইয়াই প্রসিদ্ধ হইয়া ছিলেন তাহা নহে, সৰ্ব্বসাধারণ তাহার দয়ার নিদর্শন প্রাপ্তে উপকৃত হইয়া তাহার কাছে বিক্রীত হইয়া গিয়াছিল। মুফতিপদ মওলানা ফতে মোহাম্মদের পুত্র প্রসিদ্ধ হাসন মোহাম্মদ আরঙ্গজেব বাদশাহের রাজত্বকালে শ্রীহট্টের মুফতি পদ প্রাপ্ত হন। আদালতে মোহাম্মদীয় আইন সংক্রান্ত জটিল বিষয় উপস্থিত হইলে মুফতিগণই মীমাংসা করিতেন; মোসলমানদের সাধারণ আচার ব্যবহার সম্বন্ধেও তাহাদিগকে দৃষ্টি রাখিতে হইত। ইহারা চারি পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আশিম পিতার মৃত্যুর পর মুফতি পদ প্রাপ্ত হন। কাশিমের মৃত্যু হইলে তদীয় ভ্রাতা কাশিম শ্রীহট্টের মুফতি নিযুক্ত হন এবং কাশিমের পুত্র মোহাম্মদ হাজিম খুল্লতাতের নায়েব স্বরূপ কাৰ্য্য করেন।১১ বাৰ্দ্ধক্য বশতঃ আশিমকে সত্বরেই মুফতি পদ পরিত্যাগ করিতে হইয়াছিল। তিনি বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের সময়ে নিজ পুত্র মোহাম্মদ দাইমের নামে জায়গীর ভূমির সনন্দ বাহাল করিয়া আনয়ন করেন ও তাহকে মুফতি পদ প্রদান করেন।১২ সেখ মোহাম্মদ কাজিম (আশিমের ভ্রাতা) “খানকা" অর্থাৎ ছাত্র নিবাস প্রস্তুত ক্রমে তাহার তত্ত্বাবধান ও ছাত্রবর্গকে আহাৰ্য্যদানে উক্ত খানকা পরিচালন জন্য নিজ নামে দুই খানা সনন্দে কিয়ৎপরিমাণে ভূমি প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। নবাব মীর মোহাম্মদ হাদি বাহাদুর কর্তৃক “খরচা সদরশা” বাবতে পরগণা লংলা হইতে ৪৪/১ ৪ হাল ভূমি প্রদত্ত হয়। দ্বিতীয় সনন্দে পরগণা বেঙ্গা হইতে ৪৭/কুবলা ভূমি প্রদত্ত হইযাছিল ।১৩ খাদিমী পদ এই সময়ে শাহজলভ্যালের দরগার খাদিমী কাৰ্য্য আট ব্যক্তির উপর ন্যস্ত হইয়াছিল । নাদিমগণ দরগার প্রত্যেক বিষয়ে তত্ত্বাবধান রাখিতেন। খাদিমদের "চৌকিবন্দি" লিষ্ট হইতে সানা যায় যে ঐ আট ব্যক্তির এক এক জনের অধীনে তাহাদের মনোনীত আরও অনেক কৰ্ম্মচারী থাকিতেন। মুফতি মোহাম্মদ দাইম তন্মধ্যে প্রথম চৌকির প্রধান ছিলেন ॥১৪ মুফতি দাইমের পরে তদীয় ভ্রাতা মোং কাইম মুফতি পদ পাইয়াছিলেন। তিনিও নবাব নীর মোহাম্মদ হাদি বাহাদুর হইতে এক সনন্দে রেঙ্গা, বরায়া ও শমশের নগর গং পরগণায় ৪৭/০ হাল মদতমাস প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। তাহার মৃত্যুর পর মোং নাইম ঐ পদ প্রাপ্ত হন, ইনিই শেষ মুফতি; ইহার সময়ে বৃটিশ গবর্ণমেন্ট এই পদ উঠাইয়া দেন। মুফতি বংশীয়গণ শ্রীহট্টের বিভিন্ন পরগণা হইতে যে সমস্ত ভূমি জায়গীর প্রাপ্ত হন, তাহার পরিমাণ অল্প ছিল না; ইহার সমষ্টি প্রায় ১১২০/০ হাল । পরবত্তীকালে এই সমস্ত ভূমির ১১. শ্রীহট্টের নবাব নোওয়াজিস মোহাম্মদ খান বাহাদুর হইতে আশিম মাদ্রাসার ব্যয় সস্কুলান জনা “মতালকান জায়গীর" উল্লেখে পং ইটা হইতে এক সনন্দে (নং ২৮৫) ১৫৪ ভূমি প্রাপ্ত হন । উক্ত সনন্দে উল্লেখ আছে, তৎসংসৃষ্ট কতক ভূমি তাহার পূৰ্ব্ববত্ত মুফতি হাশন ও কাশিম প্রাপ্ত হইযাছিলেন। ১২. উক্ত সনন্দের একখানা নবাব নাজিরউল্লার সময়ে (১৭৪৮ খৃষ্টাব্দ) এবং অন্য খানা নবাব এক্রামউল্লা খা বাহাদুরের সময়ে প্রাপ্ত হন। ১৩. কালেক্টরীতে উক্ত সনন্দদ্বয়ের নং যথাক্রমে ২৪৮ এবং ২৮২ দৃষ্ট হয় এবং উভয় সনন্দ ৩ এবং ৪ জলুসে প্রদত্ত হইয়াছিল । ১৪. চৌকির লিষ্ট, যথা-১ম মোং দাইম; ২য় সোণাউল্লা, ৩য় মোং গণি, ৪র্থ মসুদ সকুম. ৫ম আকবর, ৬ষ্ঠ আহমদউল্লা, ৭ম নাজিমউদ্দীন, ৮ম কলিমউল্লা ।