পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[চৌদ্দ] বংশ বৃত্তান্তে দেশের প্রখ্যাত বংশকাহিনী সন্নিবেশিত হইবারই কথা। কিন্তু এমনও ঘটিয়াছে যে, কোন স্থানের বিখ্যাত বংশাখ্যান ছাড় পড়িয়াছে, এবং অপেক্ষাকৃত অপ্রসিদ্ধ ংশকথা স্থান পাইয়াছে। এরূপ স্থলে আমরা ঈপ্সিত বিবরণী প্রাপ্ত হই নাই বলিয়াই বুঝিতে হইবে। এবং ভবিষ্যতে ভগবাদিচ্ছায় ইহার ২য় সংস্করণ হইলে প্রত্যেক স্থানের প্রখ্যাত প্রাচীন বংশকথা প্রাপ্ত হইয়া তাহা প্রকাশ করিতে সমর্থ হইব বলিয়া আশা করিতেছি। জীবনচরিত খণ্ডে জীবিত ব্যক্তিগণের কথা উল্লেখ করি নাই। এমনকি “বঙ্গের বাহিরে বাঙ্গালী”-নামক পুস্তকে উল্লেখিত "তিব্বতী বাবা” (প্রকৃত নাম নবীনচন্দ্র চক্রবর্তী যিনি প্রায় পৌণে দুই শত বৎসর হইল শ্রীহট্টে জন্মগ্রহণ করেন) এখনও সশরীরে বর্তমান আছেন বলিয়া তাহার কথাও বলা হয় নাই। দুই এক খানি জেলার ইতিহাসে জীবিত বড় লোকদের কথা দেওয়া হইলেও আমরা পূৰ্ব্ব হইতেই একল্পনা ত্যাগ করিয়াছি। আমাদের শ্রীহট্ট জননীর জীবিত সুসন্তানগণ দীর্ঘজীবী হইয়া স্বদেশের গৌরব বৰ্দ্ধন করিতে থাকুন। শ্রীহট্টের ভবিষ্যত ঐতিহাসিকগণ তাহাদের কীৰ্ত্তি কাহিনী প্রচারিত করিয়া কৃতাৰ্থ হইবেন। জীবনচরিত সঙ্কলনেও আমরা বংশ কাহিনীর রীতি অবলম্বন করিয়াছি । আমরা ইচ্ছা করিয়া কাহারও কোন পীড়াজনক কথা ছাপাইব এটা যেন কেহ মনে না করেন। শ্রীহট্টের ও শ্রীহট্টবাসীর গৌরবকীৰ্ত্তি প্রখ্যাপনই আমাদের উদ্দেশ্য। তবে মানুষ ভুল ভ্রান্তির স্বভাবতঃই অধীন। যাহা হউক, এই সকল কথা মনে করিয়া- আশা করি— সহৃদয়তা গুণে আমাদের ক্রটি গ্রহণ করিবেন না। আবার প্রেস হইতে দূরে থাকিয়া প্রাফ দেখায় মুদ্রাঙ্কণেও বহু ভুল হইয়াছে— সমস্ত শোধনের চেষ্টা অসাধ্য । যদি দেশবাসীর উৎসাহে ইহার ২য় সংস্করণ কখন হয় তবে পুনঃ সংস্করণ না হওয়া পর্যন্ত সকলেই আমাদিগকে ক্ষমা করিবেন। এবং ইহাতে সংযোজনীয় প্রখ্যাত বংশের ন্যায় বিখ্যাত ব্যক্তির কাহিনীও কিছু পাইলে তাহা অনুগ্রহ করিয়া পাঠাইয়া দিবেন, এই প্রার্থনা । শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশ প্রকাশে অনুষ্ঠাতার আর্থিক ক্ষতির কথা বলিয়াছি; তাদৃশ ক্ষতি দেখিয়াও অমান বদনে যিনি এই দ্বিতীয়াদ্ধেও ব্যয় বহনে বদ্ধপরিকর হইতে পারেনইউরোপীয় মহাসমরের জন্য কাগজের মূল্য দ্বিগুণ হইতেও অধিক হইয়া পড়িলেও যিনি ব্যয় দিতে কুষ্ঠিত হন নাই- তাহাকে একটা ধন্যবাদ কেহ ইচ্ছা করিলে দিতেও পারেন, কিন্তু আমরা জানি, তিনি ধন্যবাদের আকাঙ্খায় এই কার্য্যে উৎসাহী হন নাই। শ্রীভগবান তাহার সৰ্ব্ববিধ সৎকার্য্যে উৎসাহ ও অধ্যবসায় অব্যাহত রাখুন, এইমাত্র আমাদের কামনা। রত্নাগর্ভা এই শ্রীহট্টে অতীত যুগে কত অসংখ্য মহাত্মা জন্মগ্রহণ করিয়া গিয়াছেন। তৎকালে এইরূপ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখিবাব প্রথা না থাকায় আমরা আজ শত চেষ্টাও তাহাদের বিষয় জানিতে পারিতেছি না; কাজেই এই সংগ্রহে ক্রটি থাকিবারই কথা। বংশ ও জীবন বৃত্তান্তে যে সকল কথা দেওয়া হইয়াছে, সে সকল নিতান্ত আধুনিক কালের প্রায়শঃ উনবিংশ শতাব্দীর বড় জোর দুই চারিটা অষ্টাদশ শতাব্দীর । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সময়কার ২/৪ জন বৈষ্ণবের পরিচয় পাওয়া যায়, তাও পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর । সৌভাগ্য বশতঃ পূৰ্ব্বোক্ত অনুষ্ঠাতা মহোদয় এই সকল কীৰ্ত্তিকথা সংরক্ষণের জন্য বদ্ধপরিকর হইয়াছিলেন তাই আধুনিক হইলে ও অন্ততঃ কতক লোকের পরিচয়-বাদ সংগ্ৰহ করিয়া প্রকাশিত করিতে পারা গেল ।