পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৯৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড গোত্রীয় এক ব্যক্তি নিরূপিত দিনে প্রথম তাহার দৃষ্টিপথগামী হইয়া কন্যা লাভে সমর্থ হইয়াছিলেন । ধৰ্ম্ম নারায়ণ জামাতাকে “শ্রীনাথপুর যৌতুক স্বরূপ দান করিলেন এবং তাহাদের সামাজিক পদবী উন্নীত করিবার জন্য চৌধুরী উপাধি প্রদান করিলেন। কিন্তু দাতার কোনরূপ সনন্দ দানের অধিকার না থাকায় এই উপাধির মূল্য অধিক ছিল না।” চৌধুরাই প্রাপ্তি ও তালুক বন্দোবস্ত ধৰ্ম্ম নারায়ণের বংশে৬ মাধব রায় এক জন প্রসিদ্ধ লোক ছিলেন । তিনি সম্রাট শাহজাহান হইতে ছয় ছিরি পরগণার চৌধুরাই সনন্দ প্রাপ্ত হন । এই বংশে দশসনা বন্দোবস্ত কালে গোনাথের পুত্র রূপ রায়, বিপ্রহরি ও রামবল্লভ বৰ্ত্তমান ছিলেন; তন্মধ্যে বিপ্রহরি যোগসিদ্ধ উদাসীন পুরুষ ছিলেন, কথিত আছে যে বনের বাঘ তাহার কাছে কুকুরবৎ শান্ত ব্যবহার করিত। রাজ বংশীয় বলিয়া সৰ্ব্ব সাধারণ লোকে তাহাকে “রাজা" বলিয়াই সম্বোধন করিত। রূপ রায়ের ও রমা বল্লভের নামে তত্ৰত্য ১নং ও ২নং তালুকের বন্দোবস্ত হয়। রূপ রায়ের পুত্র গোবিন্দ রায় নিজ নামে ৩নং তালুকের বন্দোবস্ত গ্রহণ করেন ৭ এই সময় শ্রীনাথপুরের চৌধুরী বর্গও নিজ নিজ নামে অন্যান্য তালুকের বন্দোবস্ত গ্রহণ করিয়া ছিলেন। পাঁচালী রচয়িতা ও পদ্মপুরাণ প্রণেতা রূপ নারায়ণের ষষ্ঠ পুরুষে গুরু প্রসাদ জন্ম গ্রহণ করেন । গুরু প্রসাদ ধাৰ্ম্মিক ও বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন । ১২৯১ বঙ্গাব্দে তিনি দধিবামনের দ্বিতল মন্দিরের সংস্কার কার্স সম্পাদন করেন । গুরু প্রসাদ চৌধুরী বাঙ্গালা পয়ারাদি ছন্দে “শনির পাচালী, সত্য নারায়ণের পাচালী ও ঘোর চণ্ডীর পাচালী নামে তিনখানা পাচালী রচনা করিয়া গিয়াছেন।” ইহারই জ্ঞাতি ভ্রাতা কমল নারায়ণ রায় চৌধুরী একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ওকালতী ব্যবসায় করিতেন । পূৰ্ব্বোক্ত সাগরদীঘীর পারে তিনি চৌধুরী-বাজার নামে এক বাজার স্থাপন করিয়াছিলেন । আজ কাল ঐ বাজারের অবস্থা হীন হইয়া পড়িয়াছে । তিনি “একখানা পদ্মা পুরাণ রচনা করিয়া গিয়াছেন।”৮ ইহার পুত্র শ্রীযুক্ত সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরী হইতে আমরা এই বিবরণ এবং তদনুষঙ্গে অন্যান্য অনেক বিবরণ প্রাপ্ত হইয়াছি। ৬. এই ভাগে সন্নিবেশিত ট পবিশিষ্টে বংশ তালিকা দ্রষ্টব্য । এই বংশ বিবরণ প্রদাতা শ্ৰীযুত সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীর মতে মাধব, ধৰ্ম্মনারায়ণেব পুত্র। অপরের প্রদত্ত বংশ তালিকায় মাধব তাহার অতিবৃদ্ধ প্রপৌত্র ছিলেন । এ স্থলে মনে হইতেছে যে, ১৩১৪ বাংলার ৩রা জ্যৈষ্ঠ তারিখের আনন্দ বাজার পত্রিকায় ইটাবাসী খ্যাত নামা উকীল খ্ৰীযুত হরকিঙ্কর দাস মহাশয, রাজভ্রাতা ধৰ্ম্মনারায়ণকে ছয়চিরির চৌধুরী বংশের আদি পুরুষ বলিয়া স্বীকার করিতে যে প্রস্তুত হন নাই, বোধ হয় ইহাই তাহার কারণ। কিন্তু সে কথা স্বীকৃত হয় নাই । ৭. তালুক বন্দোবস্তকালে রূপরায় জীবিত না থাকিলেও গোবিন্দরায় পিতৃনামে বন্দোবস্ত নিয়া থাকিতে পারেন। পিতৃ নামে তালুকের নাম রাখার বহুতর উদাহরণ আছে। তাহা হইলে গোবিন্দরায় ঐ সময় নিশ্চিত জীবিত ছিলেন । মাধব রায়ের সময় নিরূপণে এ কথা বিবেচ্য। ট পরিশিষ্টে মস্তব্যে ইহা আলোচিত হইয়াছে । ৮. এসল গ্রন্থ প্রকাশিত হয় নাই। যে যে বংশে গ্রন্থকারগণের উদ্ভব, সমর্থ হইলে সেই বংশীয় ব্যক্তিবর্গেরই কৰ্বল্য যে তাহা মুদ্রিত করিয়া বিলুপ্তির হস্ত হইতে রক্ষা করা। কমল নারায়ণেব মৃত্যুর পর শ্ৰীযুত গিরীশ চন্দ্ররায় চৌধুরী “বিলাপলহরী” প্রকাশ করিয়াছেন। কিন্তু তাহার পরিবৰ্ত্তে যদি তদীয় গ্রন্থ খানা প্রকাশিত হইত, তাহাতে সাহিত্যের সেবা, তথা মৃতের নাম রক্ষা হইত না কি?