পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২০৪ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড পাইলেই কেবল তিথি জিজ্ঞাসিতেন, আর জিজ্ঞাসার তারিখটাও অমাবস্যাতেই পড়িত, অবস্থা বিবেচনায় ইহা বলিতে হয়! হরবল্লভ একজন তপোনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন, একথার প্রমাণ দিতে তদীয় ব্যবহৃত "মহাশঙ্খময়ী সিদ্ধমালা” বৰ্ত্তমান রহিয়াছে। তাহার অধস্তন তিন পুরুষে ক্রমানুসারে এই সিদ্ধমালা জপ করিয়া সিদ্ধিলাভ করেন। তর্কভূষণ মুর্শিদাবাদ হইতে দেশে আসিলে অচিরেই তাহার গুণগ্রাম প্রচারিত হইয়া পড়ে; শ্রীহট্টের নবাব মোহাম্মদ জান বাহাদুর ২১ জলুস ১৫ই রমজান তারিখের সনন্দে (নং ৭১) তাহাকে ইট ও আলীনগর হইতে ৬।১॥৬ ॥৬ ভূমি ব্ৰহ্মত্র দান করেন;৭ হরবল্লভ ১১৭৫ বাংলা পৰ্যন্ত জীবিত ছিলেন, তৎপর বর্ষে তাহার মৃত্যু হইলে তদীয়পুত্র রামবল্লভ ভট্টাচাৰ্য্য উক্তভূমি “তছরূপ" করেন। পিতার মৃত্যুর পরে রামবল্লভ মুর্শিদাবাদে গমন করিয়াছিলেন এবং তপঃস্থলে অবস্থিতি পূৰ্ব্বক মহাশঙ্খময়ী মালা জপ করতঃ সিদ্ধি লাভ করেন। হরবল্লভের পুত্রের নাম রাধাবল্লভ ও রত্নবল্লভ। রত্নবল্লভ পিতামহের আশ্রমে গিয়া কয়েক বৎসর মালা জপ করিয়াছিলেন, তথা হইতে দেশে আসিয়া শিবমন্দির ও দুর্গামন্দির নিৰ্ম্মাণ পূৰ্ব্বক অতুল যশঃ ও পুণ্যভাগী হইয়াছিলেন। সতী কমলাবতী রত্নবল্লভের পত্নী এক আদর্শ সতী ছিলেন, তাহার নাম কমলাবতী দেবী। পতির মৃত্যুর পর তিনি স্বামী দেহ বক্ষে ধারণ করিয়া তনুত্যাগ করিতে উদ্যতা হন; আত্মীয় স্বজন তাহাকে বিরত করিতে কত চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তিনি কোন নিষেধ বাধা না মানিয়া জ্বলন্ত অনলকুণ্ডে দেহ সমর্পণ পূৰ্ব্বক হিন্দু রমণীর সতীত্বের উদাহরণ প্রদর্শন করিয়া গিয়াছেন। আখালিয়া তীরে সেই “সতীকুণ্ড" অদ্যাপি বিদ্যমান আছে। অভিশাপ রতুবল্লভের চারিপুত্র, তন্মধ্যে কনিষ্ঠপুত্র নিঃসন্তান ছিলেন । দ্বিতীয় পুত্র রঘুদেব পরম সাধক ছিলেন, এবং স্থানীয় জমিদারের নিকট হইতে অনেক ভূমি ব্ৰহ্মত্র প্রাপ্ত হন; তাহারা সকলে তাহাকে শ্রদ্ধা করিতেন এবং স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ব্ৰহ্মত্র দান করিয়াছিলেন। ইহার দুই পুত্র, ইহাদের নাম কৃষ্ণনাথ তর্কালঙ্কার ও গোলক নাথ ভট্টাচাৰ্য্য। তর্কালঙ্কার ন্যায় শাস্ত্রের পণ্ডিত ছিলেন । তিনি কাশীবাসী বেদান্ত সরস্বতী খ্যাতি বিশিষ্ট প্রতিপত্তিশালী এক পণ্ডিতকে শাস্ত্র বিচারে পরাস্ত করায় সেই পণ্ডিত ক্রুদ্ধ হইয়া তাহাকে অভিশাপ প্রদান করেন। তাহার কিছু কাল পরেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। ১২৮৯ বাংলার ১লা চৈত্র তারিখে ইহাদের গৃহদাহ হয়। পূৰ্ব্বোক্ত "মহাশঙ্খ মালা" ইদানীং কিংখাপ বস্ত্র বেষ্টনী মধ্যে সিন্দুকে রক্ষিত হইত; সকলই ভাবিল যে সিদ্ধমালা এতদিনে নষ্ট হইল; কিন্তু পরে দেখা গেল যে মালা নষ্ট হয় নাই— সে মহামালা জুলে নাই। তন্ত্রশাস্ত্রে সুপণ্ডিত গোলক নাথের সুযোগ্য পুত্র "মহাশক্তি বা পরমেশ্বর” গ্রন্থপ্রণেতা শ্রীযুক্ত মহেন্দ্ৰ নাথ কাব্য সাঞ্জখ্যতীর্থ মহাশয়ের অধিকারে উক্ত মালা এক্ষণে আছে। ৭. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্তের পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৩য় অধ্যায়ে “অনির্দিষ্ট কালীয় আমিলদের নাম" তালিকায় নবাব মোহাম্মদ জান বাহাদুরের নাম লিখা হইয়াছে। এই সনন্দে "২৩ জলুস" তারিখ প্রাপ্ত হওয়ায়, উহা সম্রাট মে সম্মদ শাহের রাজ্যরোহণের কাল কলিয়া অবধারিত হইল। কাজেই এই সনন্দ প্রাপ্তির কাল ১৭৪২ খৃষ্টাব্দ । এই সময়েই নবাল মোহাম্মদ জানের শ্রীহট্ট শাসন কাল। ইনি সম্ভবতঃ শ্রীহট্টের নায়ের ফৌজদার ছিলেন।