পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম অধ্যায় : বিবিধ স্থানের বিভিন্ন বং শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৫৫ পরেই সুখময়ীর গর্ভ লক্ষণ প্রকাশিত হয়। ইহাতে আত্মীয় স্বজন লজ্জায় ম্রিয়মাণ হইয়া নানারূপে তাহাকে ভৎসনা করিতে লাগিলেন । গর্ভের দশম মাসে ধনঞ্জয় দেশে আসিলেন এবং পত্নীর গর্ভের কথা শুনিয়া তিনি লজ্জা ও ক্ষোভে একবারে অভিভূত হইলেন; তিনি আর পত্নীর সহিত দেখা করিতে চাহিলেন না। এই কি তাহার বিমল-চিত্তা বিশ্বস্থা বনিতা? ইহাই কি নারীজাতির সারল্য? সদ্য তীর্থগত ধনঞ্জয়ের চিত্ত অনেকটা ভারাক্রান্ত হইয়া পড়িল, তিনি বাড়ীতে না গিয়া অন্যত্র নিশি যাপন করিলেন। সে রাত্রে তাহার সহজে নিদ্ৰা আসিল না, অবসন্নদেহে শ্যামরায়কে সম্বোধন করিয়া তিনি অনেক ক্ৰন্দন করিলেন। শেষ রাত্রে একটু নিদ্ৰাকর্ষণ হইল, তখন স্বপ্নে দেখিতে পাইলেন যে শ্যামরায় তাহাকে বলিতেছেন-“ধনঞ্জয়, মনে সংশয় কেন? তোমার অনুরক্তা পত্নীকে ঘৃণা করিও না, এ গর্ভ অপবিত্র নহে, এ গর্ভে তোমার এক ধাৰ্ম্মিক পুত্র জাত হইবে।”২ শ্যাম রায়ের ভক্ত ধনঞ্জয় আর স্ত্রীর প্রতি সংশয় পোষণ করিতে পারিলেন না, গৃহে গেলেন। সেই গর্ভে যে শিশু জাত হইল (১১৭৫ বঙ্গাব্দ), শ্যামরায়ের নামে ধনঞ্জয় তাহার নাম শ্যামকিশোর রাখিলেন। গ্রন্থকার ও প্রচারক শ্যাম কিশোর রায়ের বাল্যাবধিই শ্যামরায়ের প্রতি আসক্তচিত্ত ছিলেন, বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে ধৰ্ম্মতত্ত্ব অবগত হইতে তাহার একান্ত ইচ্ছা হইল, তদবস্থায় দুলালীস্থ তিলকরাম শিরোমণির নিকট তিনি “কিশোরী ভজন" তত্ত্ব শিক্ষা করেন এবং এই মত গ্রহণ করিয়া ইহাই যাজনও প্রচার করেন। তাহার সম্বন্ধে রঘুনাথ লীলামৃত নামক মুদ্রিত গ্রন্থে লিখিত আছেঃ “পিরীতি মালা চিকণ কালা শোভেছিল গলে । সেই মালা কৃপা করি দিয়াছে সকলে।" কিশোরীভজন বা সহজধৰ্ম্ম প্রচারার্থ তিনি নিম্নলিখিত গ্রন্থগুলি লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, “সহজ উজ্জল চিন্তামণি” “হরিভক্তি তরঙ্গিনী” “জয়দেব চরিত্র;” তদ্ব্যতী তৎকৃত “উপদেশ নিধি বিধিমালা” নামক একখানা গ্রন্থ আমরা পাইয়াছি, উহার পদসংখ্যা ১৬৭টি ৩ এই গ্রন্থগুলি ব্যতীত তৎকৃত বহুতর বিচ্ছিন্ন পদ ও হাস্যরসাত্মক দোহা আছে। শ্যামকিশোর ঘোষ মণিপুর রাজবাটীতে গিয়া একদা কীৰ্ত্তন করিয়া মহারাজকে আনন্দিত করেন এবং রাজকর্তৃক তখন “গোসাঞি" উপাধি প্রাপ্ত হন। শ্যামকিশোর ঘোষের শিষ্যসম্পদ অল্প ছিল না, কিন্তু তাহার অধিকাংশই হীনবংশ সম্ভূত। ১২৬০ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে তাহার পরলোক গমন ঘটে; ইহার পুত্রের নাম কুঞ্জকিশোর অধিকারী। কুঞ্জকিশোর নিঃসন্তান ছিলেন, তাহার কৃত ২/৪টি ধৰ্ম্মসঙ্গীত প্রাপ্ত হওয়া যায়। ২. এ বিষয়ে বিবিধ আখ্যান এযাবৎ শুনিতে পাওয়া যায়, এস্থলে রঘুনাথলীলামৃতের প্রকাশিত বৃত্তান্তেরই অনুসরণ করা গিয়াছে, তাহাতে একথাও লিখিত আছে, যথা “শ্যামকিশোর গোসাঞির জন্ম বিবরণ। বিগ্রহ শ্ৰীশ্যামরায় হইতে জন্ম হইল । যে রূপেতে শ্যাম কিশোর প্রকাশ পাইল।" ইত্যাদি । ৩. “সহজ উজ্জল চিন্তামনি" গ্রন্থ ১৬ মালায় পূর্ণ; “উপদেশ নিধি বিধি মালা" উহারই এক অংশ বা মালা কিনা বলিতে পারি না। আমাদের প্রাপ্ত হস্তলিপি লাতু নিবাসী যুগল কিশোর রায় ১২৭৪ বাং ২৪ শে আষাঢ় লিপিবদ্ধ করেন।