পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম অধ্যায় : বিবিধ স্থানের বিভিন্ন বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৫৯ ক্রোধে চলিয়া যান ও সতরশতী পরগণাধীন বাউরভাগের ধর বংশে বিবাহ করিয়া সাধুহাটী গ্রামে বাটী প্রস্তুতক্রমে তথায় বসতি করেন। তোলারামের পুত্রের নাম বসুরাম, তৎপুত্র রঘুরাম, তাহার পুত্র কৃপারাম। কৃপারামের প্রথম পুত্রের নাম কৃষ্ণকান্ত, ইনি শ্রীহট্ট জজ আদালতের পেস্কার নিযুক্ত হন। উন্নতির সহিত সেরেস্তাদারের পদ পাওয়ার তাহার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু মীর মোনশী কৌশলে উক্ত পদ প্রাপ্ত হন, এই অন্যায় কাৰ্য্য দর্শনে তিনি পদত্যাগ পত্র দাখিল করেন, জজ সাহেব তাহাকে একাধিকবার নিষেধ করিলেও তিনি তাহা শুনেন নাই। অতঃপর তিনি জয়ন্তীয়া রাজসরকারে কোন উচ্চপদে নিযুক্ত হন । এই সময়ে জয়ন্তীয়া-পতির ঋণ হওয়ায় কয়েকটি হাতী বিক্রয় করিয়া ঋণ আদায় করিতে ইনি পরামর্শ দেন ও তদনুরূপ কার্য্যের উদ্যোগ করেন। পরে অপরের পরামর্শে হস্তী বিক্রয়ে ঋণ শোধকরা মহারাজ অপমানজনক জ্ঞান করায়, তিনি বিরক্ত হইয়া কাৰ্য্যত্যাগে তথা হইতে আসাম চলিয়া যান । এই সকল ঘটনাতে তাহার মানসিক তেজস্বিতর পরিচয় পাওয়া যায়। আসাম গমন করিয়া তথায় কিছুকাল অবস্থিতির পর কোন সদাশয় ইংরেজের সমবিভ্যাহারে তিনি কলিকাতায় গিয়া তত্ৰত্য ফৌজদারী আফিসে মহাফেজ নিযুক্ত হন। ইনি স্বীয় উপাৰ্জ্জিত অর্থে মাতার দানসাগর শ্রাদ্ধ করিয়াছিলেন এবং পরে গয়াধামে গমন করিয়া শ্রাদ্ধে প্রভূত ব্যয় বিধান করেন । তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা সোণারাম নাগের পুত্র স্বরূপচন্দ্রের বিবাহ তিনিই অতি সমরোহের সহিত দিয়াছিলেন: ৭৬ বৎসর বয়সে ১২৫১ সালে তাহার মৃত্যু হয় । স্বরূপচন্দ্র শ্রীহট্ট জজ আদালতের সেরেস্তাদারের পদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন । তিনি স্বোপাজ্জিত অর্থে বাড়ীতে দালান কোঠা ও পুষ্করিণী প্রস্তুত করেন । তাহার পুত্র শ্রীহট্ট মিশনস্কুলে ইংরেজী শিক্ষা করিয়া জজ আদালতে মোহরের নিযুক্ত হন ও মহাফেজের কাজ কবিয়া শেষ কালে কাশী গমন করেন; ইহাব পুত্র ও পৌত্রাদি জীবিত আছেন। পরগণা-সাতগাও ওম বংশ কথা খোয়াজ ওসমানের কৰ্ম্মচারী শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশে প্রসঙ্গক্রমে লিখিত হয় যে, পূৰ্ব্ব ময়মনসিংহের খোয়াজ খা শ্রীহট্টের ইটাবিজেতা খোয়াজ ওসমান খা হইতে অভিন্ন বলিয়া অনুমিত । এই অনুমান যে অমূলক নহে, খোয়াজ কার অধিকৃত মুয়াজ্জমাবাদ রাজ্যের নামের অর্থবিচারেই তাহা বুঝা যায়। ইহার অর্থ পবিত্র স্থান; পূৰ্ব্ব হইতে হযরত শাহ জলালের সাধন ও সমাধি ক্ষেত্র শ্রীহট্টই মোসলমানদের একমাত্র তীর্থস্থান। মুয়াজ্জমাবাদের সীমা লাউড়রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শ্রীযুক্ত কালীকিশোর ওম মহাশয়ের লিখিত যে বংশ বিবরণ শ্রীযুক্ত চন্দ্র কুমার ওমৃ মহাশয় আমাদিগকে প্রেরণ করিয়াছেন, তাহাতে জানা যায় যে বঙ্গীয় দশম শতাব্দীর প্রথম ভাগে খোয়াজ ওসমান খা পূৰ্ব্বাঞ্চলে আগমন করেন ১১ ময়মনসিংহের খালিজুরী নিবাসী সাতানাথ ওমের পুত্রের নাম রঘুনাথ: কামাখ্যা ও মহেশনাথ; ইহারা খোয়াজ ওসমান খার কৰ্ম্মচারী নিযুক্ত হইয়াছিলেন। ইন্দ্রকুমার বাবু লিখিয়াছেন যে এই খোয়াজ ওসমান ৯৬৩ হিঃ অব্দে (১৫৪৪ ১১. এই সময়ে বঙ্গের সিংহাসনে হুসেন শাহ ছিলেন। শেব শাহেব সময়ে ইটা বিজিত হয়।