পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-তৃতীয় খণ্ড খৃষ্টাব্দ১২) ইটার রাজা সুবিদ নারায়ণকে পরাস্ত করিয়া তথায় গড় ও বাড়ী প্রস্তুত করেন। এই যুদ্ধে সীতানাথের পুত্ৰগণ সহায়তা করায় সাতগাও উপত্যকা প্রদেশে তাহারা জায়গীর প্রাপ্ত হন, এবং ময়মনসিংহ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক জায়গীরপ্রাপ্ত ভূমে বাড়ী নিৰ্ম্মাণ করিয়া এথায় আসিয়া বাস করেন। সীতানাথের পুত্রত্ৰয় পরে নবাব হইতে যথাক্রমে চৌধুরী, রায় ও লালা উপাধি প্রাপ্ত হন। সেইই স্থানে কামাখ্যা ও মহেশের কৃত দীর্ঘিকাদ্বয় “কামুরদীঘী" ও "মহেশনাথের দীর্ঘী" নামে অদ্যাপি বৰ্ত্তমান আছে। দত্ত খা খণিত একটি দীর্ঘিকাও সেই স্থানে দেখতে পাওয়া যায় । সাধক নন্দকিশোর ওম বংশে ভাড়াউড়ার নন্দকিশোর রায় একজন খ্যাতনামা ব্যক্তি, ইনি শৈব ছিলেন, এবং কামাখ্যাক্ষেত্রের সিদ্ধ মহাত্মা স্বগীয় পূর্ণানন্দ স্বামীর নিকট দীক্ষিত হইয়াছিলেন। তাহার ধৰ্ম্মনিষ্ঠা দর্শনে তদানীন্তন কালেক্টর ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ ড্রমণ্ড তাহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন। মৃত্যুর অষ্টাহ পূৰ্ব্বে তিনি বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে অতি শীঘ্রই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হইবেন । তিনি অনেকের নিকট একথা ব্যক্ত করিয়াছিলেন । এই সময় তিনি ড্রমণ্ড সাহেবকে বলিয়া নিজ ভ্রাতুষ্পপুত্রকে চাকুরী দেওয়াইয়া ছিলেন। তিনি যাহাকে যাহা বলিতেন, তাহাই ফলিয়া যাইত, তিনি বাক্যসিদ্ধ ছিলেন। নিৰ্ম্মাইশিবের পূজারী "সিদ্ধা কাশীনাথ” তাহার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন।১৩ পরগণা-বালিশিরা তরফদার বংশ কথা বালিশিরা ত্রিপুরেশ্বরের অধিকৃত থাকা কালে, তরফদার বংশীয় উমানন্দ সোম স্বীয় পুরোহিত সহ এদেশে আসিয়া ত্রিপুরাধীপতির আশ্রয় প্রাপ্ত হইলে, তিনি ত্রিপুরাধিপতি হইতে বালিশিরার একাংশ প্রাপ্ত হন । “উত্তর শূর” গ্রাম ঐ অংশে স্থাপিত; উমানন্দ এই স্থানেই বাটী প্রস্তুত করেন। উমানন্দের পুত্র রামানন্দ, তাহার পুত্রের নাম শ্রীচন্দ্র। শ্রীচন্দ্র দেবী দশভূজার একান্ত অনুরক্ত ভক্ত ছিলেন, সৰ্ব্বদা দেবীর পাদপদ্ম তাহার চিন্তনীয় ছিল এবং তাহাতেই বিভোর থাকিতেন । ইহার কৃত স্বগীয় দুর্গবিষয়ক সঙ্গীত পাওয়া যায ॥১৪ ইহার সময়ে উত্তর শূর মোসলমান রাজ্যভুক্ত হয়। শ্রীচন্দের হরবল্লভ ও শ্যামরায় নামে দুই বংশ প্ৰবৰ্ত্তক পুত্র হয়। শ্যামরায়ের পুত্রের নাম রামবল্লভ ও রামভদ্র । বাল্যকাল হইতেই বৈষ্ণবধৰ্ম্মে তাহাদের অত্যন্ত অনুরাগ ছিল; বিদ্যাবিনোদ বংশীয় বাণী ব্রহ্মচারীর নিকট হইতে ইহারা বিষ্ণুমন্ত্র গ্রহণ করেন । ইহারা স্বীয় গুরুদেবকে যে ভূমি দান করিয়াছিলেন, পরবর্তীকালে গুরুবংশীয় রঘুনন্দন ব্রহ্মচারীর নামে তাহা বন্দোবস্ত হয় । ১১. গ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ১য় ভাগ ২য় খণ্ড ৭/৮ অধ্যাযে টীকা দ্রষ্টব্য। ১৩. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত উত্তরাংশ ৪র্থ ভাগে ইহার কথা উক্ত হইবে । ১৪. শ্রীচন্দ্র রায়ের কৃত একটি আরতি গান নমুনা স্বরূপ দেওয়া গেল “আরতি কলি মাগো মুবতি তেরা । রাজ বাজ্যেশ্বরী মন্দিরে মেবা । তুঙ্গালের জলে মায়ের চরণ পাগলে । রত্ন সিংহাসনে বসে চামৰ দুলাওয়ে৷ কটোলা ভরিয়া মধুভোগ লাগাওয়ে । কপুর সহিতে থিলি তাম্বুল যোগাওযে । ভকতি করিয়া কহে গ্ৰীচন্দ্র রায় হে । কৃপাকরি বৈস মাগো ভজি রাঙ্গা পায়ছে।"