পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম অধ্যায় মোসলমান বংশ বিবরণ পরগণা-লং আদি কথা বৰ্ত্তমানে শ্রীহট্টের জমিদারবর্গ পৃথিমপাশার জমিদারের সম্পত্তিই আয়-বহুল ও বৃহৎ। "সন ৯০৬ বঙ্গাব্দের শেষভাগে পারস্যদেশীয় রাজপরিবারস্থ জনৈক মহাত্মা সংসারধৰ্ম্মে বীতস্পৃহা হইয়া দেশভ্রমণে বহির্গত হন। তিনি বহুদেশ পর্য্যটন করিয়া অবশেষে ভারতবর্ষের অন্তর্গত দিল্লী মহানগরীতে উপস্থিত হইলে তৎকালীন লোদিবংশীয় সম্রাট উপরোক্ত মহাত্মার আদিবৃত্তান্ত এবং সংসারধৰ্ম্মে অনস্থা অবগত হইয়া তাহাকে সম্মানপূৰ্ব্বক গ্রহণ করিলে এবং যাহাতে তাহার অবশিষ্ট জীবন সুখ স্বচ্ছন্দে নিৰ্ব্বাহ হইতে পারে, তদুপযোগী জায়গীর প্রদান করিলেন। সম্রাটের অনুরোধ অতিক্রম করিতে না পারিয়া এই মহাত্মা সকিসালামত শ্রীহট্ট জিলার অন্তর্গত ংলা পরগণার পৃথিমপাশা মৌজাতে (সম্রাটপ্রদত্ত জায়গীর ভূমে) বাস করিতে থাকেন। উক্ত মৌজার অনতি দূরবত্তী রাজনগর মৌজার রাজকন্যার ভুবনমোহন রূপলাবণ্যে মাহাত্মা সকিসালামত বিমোহিত হইয়া তাহার পাণিগ্রহণ করিতে প্রস্তাব করে। , তদনুসারে যথা সময়ে বিবাহকার্য সুসম্পন্ন হওয়াতে অতিসুখে মনের আনন্দে কালাতিপাত করিতে লাগিলেন “১ সন্তান সস্তুতি এই কন্যা ইটার রাজভ্রাতা, পলায়িত বীরচন্দ্র নারায়ণের দুহিতা, ইহা পূৰ্ব্বে উক্ত হইয়াছে ২ এই কন্যার গর্ভে এক পুত্র জাত হয়, তাহার নাম খাঞ্জা খা । পিতার মৃত্যুর পর খাঞ্জা খা দক্ষতার সহিত জায়গীর শাসন করেন ও সম্পত্তির উন্নতি সাধন করেন। খাঞ্জা খার পুত্রের নাম শামস্ উদ্দীন | “ঐ শামস উদ্দীন ১০৩০ বঙ্গাব্দ হইতে প্রশংসার সহিত সুখে কাল যাপন করেন । শামস উদ্দীনের মৃত্যুর পর তাহার সুযোগ্য পুত্র মোহাম্মদ রবি পিতৃসম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী হইয়া সুকৌশলে রাজ্যশাসন করিতে ছিলেন।" মোহাম্মদ রবি পারস্য ভাষায সুপণ্ডিত ছিলেন এবং তিনি মৌলবী উপাধি লাভ করিয়া মুর্শিদাবাদে গমন করেন। ১. উদ্ধত অংশে সব শ্ৰীযুত রামকৃষ্ণ দত্ত প্রণীত "আলী আমজদ খাঁর জীবন চরিত" পুস্তিক হইতে গৃহীত । ১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ৭ম অধ্যায এবং ৩য় ভাগ ২য় খণ্ড ১ম অধ্যায় "বীব নালায়ণ সংবাদ" দ্রষ্টব্য । ৩য় ভাগ ৩য় খণ্ড ৪র্থ অধ্যায়ে লিখিত হইয়াছে যে এতদ্ব্যতীত সকি সালামত অন্য এক লিলাহ করিয়াছিলেন । ৩. শামস উদ্দীন ১০৩০ সালের পূৰ্ব্ব হইতে বৰ্ত্তমান দৃষ্ট হইবে যে, মোহাম্মদ ববি ১১৪১ সালে প্রথম সনন্দ প্রাপ্ত হন, এ উভয় সময়ের (১১৪২-১০৩০=) মধ্যে ১১১ বৎসর ব্যবধান । পিতাপুত্রে এ ব্যবধান হইতে পাবে। কি? ১০৩০ সালেই শামস উদ্দীন "প্রশংসিত" হন, তখন তিনি তরুণ বয়স্ক; এবং তাহার পুত্র রবি বৃদ্ধ বয়সেই (১১৪১ সালে) সনন্দ পাইয়া থাকিবেন । ফলে এই দীর্ঘজীবী (পীর) বংশে পিতাপুত্রের মধ্যে তাহাতেই সময়ের এরূপ তফাৎ থাকা অসম্ভব না হইতে পারে ।