পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় : বিবিধ বংশীয় ব্রাহ্মণ বিবরণ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ২৯৯ কলিযুগে সতীর স্বেচ্ছায় শরীর ত্যাগের ঈদৃশ উদাহরণ দৃষ্টে লোক স্তম্ভিত হইয়া তদীয় মহিমা কীৰ্ত্তন করিতে লাগিল। আজ পর্য্যন্ত সতীর অপূৰ্ব্ব কীৰ্ত্তিকথা বিলুপ্ত হয় নাই, আজ পর্যন্ত বক্ষিত হইয়া লোকে এই কথা পরিকীৰ্ত্তনপূৰ্ব্বক তাহার জয়ধ্বনি করিয়া থাকে। যথাপ্রাপ্ত এ অদ্ভুত বৃত্তান্তটি এস্থলে সন্নিবেশিত করিলাম। ঠাকুর পরশের খুল্লতাত সঙ্গতরায় বানপ্রস্থ আশ্রমাবলম্বনে “সঙ্গতরায় ব্রহ্মচারী” নামে অভিহিত হইতেন । গোপীনাথের ৬ষ্ঠ পুরুষে শ্ৰীবল্লভ শাখায় রামশঙ্কর রায় নিজ পিতার শ্মশান ভূমিতে পঞ্চাশ হস্ত উচ্চ এক ইষ্টক মন্দির প্রস্তুত করিয়া তাহাতে শিবপ্রতিষ্ঠা করেন। ইনি একজন জ্যোতিষজ্ঞ পণ্ডিত ছিরেন; গণনা দ্বারা নিজ মৃত্যুকাল অবধারণে, যথাকালে কলিকাতায় গিয়া কালীগঙ্গা লাভ করেন । এ বংশীয় কাশীনাথ চৌধুরী কাশীতে কাশীনাথ শিব স্থাপন করিয়া কাশী প্রাপ্ত হন বলিয়া আমাদের প্রাপ্ত বিবরণীতে লিখিত হইয়াছে, কিন্তু (উক্ত বংশীয় জনৈক ব্যক্তি প্রেরিত) আগনার মুদ্রিত চৌধুরী বংশের তালিকাতে ইহার নাম দৃষ্ট হইল না। পরবর্তী কালে এ বংশে যাহারা আর্থিক উন্নতি করিয়া গিয়াছেন, তন্মধ্যে স্বপ্রতিষ্ঠ শ্যামানন্দ চৌধুরীর নাম উল্লেখযোগ্য; ইনি প্রায় ২৫ বৎসর কাল মোক্তারী ব্যবসায় করেন; ইহার মাসিক আয় সহস্র মুদ্রার নূ্যন ছিল না; নিজ চেষ্টাতেই ইনি প্রায় পঞ্চসহস্র মুদ্রা আয়ের ভূসম্পত্তি অৰ্জ্জন করিয়া গিয়াছেন । পুরকায়স্থ বংশ কথা এই বংশের আদিপুরুষ সুবিদরায়, রাঢ়দেশ হইতে আসিয়া প্রথমে দুলালীতে কিছুকাল বাস করেন বলিয়া আমাদের বিবরণ প্রদাতা লিখিয়াছেন। পরে তিনি সেই স্থান পরিত্যাগ করিয়া আগনা পরগণার মধ্যসমত মৌজায় গিয়া বাড়ী প্রস্তুত করেন। পরে ইহার বংশধরগণ রাজকীয় পাটওয়ারি পদে নিযুক্ত হইয়া পুরকায়স্থ পদবি প্রাপ্ত হন। এই বংশের হরেকৃষ্ণ পুরকায়স্থ ত্রিপুরার মহারাজের দেওয়ান নিযুক্ত হইয়া মহারাজের অনুগ্রহে অনেক সম্পত্তি অৰ্জ্জন করেন। ইহার পরে রাধাকৃষ্ণও স্বীয় চেষ্টায় অনেক ধন অৰ্জ্জন করেন; ইনি রসুলগঞ্জের মুন্সেফীর উকীল নিযুক্ত হইয়াছিলেন । এ বংশে সুবিদরাম হইতে বৰ্ত্তমানে ৯/১০ পুরুষ চলিতেছে ৫ তালুকদার বংশ এই বংশের আদিপুরুষের নাম যাদব । এই বংশের বিশেষ বিবরণ প্রাপ্ত হওয়া যায় নাই । এই বংশীয় গৌরচরণ কৃত একটি অত্যুচ্চ মন্দির আছে, উহার উচ্চতা ১০০ হস্ত এবং পরিধি প্রায় ৪০ হস্ত । এই মন্দিরটি তিনি তাহার পিতার শাশান ক্ষেত্রে নিৰ্ম্মাণ করিয়া ছিলেন। গৌরীচরণ কাশীযাত্রা করিয়া সুদীর্ঘকাল কাশীবাসপূৰ্ব্বক কাশীপ্রাপ্ত হন। ৫. পুরকায়স্থ বংশের একটী বংশধারা এস্থলে প্রদত্ত হইল যথা ঃ-সুবিদবায়, ইহার তিন পুত্রের একজনের নাম জগৎবল্লভ, ইহার ২য় পুত্র ভবানন্দ, তৎপুত্র কাশীনাথ, তৎপুত্র বামগোপাল, তৎপুত্র পঞ্চানন, ইহার নন্দকিশোরও রঘুনাথ নামে দুই পুত্র হয়, তন্মধ্যে রঘুনাথের পুত্রই দেওয়ান হরেকৃষ্ণ, ইহার পুত্রের নাম প্রাণকৃষ্ণ । নন্দরামের পুত্রের নাম কেবলরাম, তৎপুত্র কীৰ্ত্তিরায়, তৎপুত্র রাম নারায়ণ। পূৰ্ব্বোক্ত জগৎবল্লভের অন্যপুত্র শিবানন্দের বংশে রাধাকৃষ্ণের উদ্ভব হইয়াছিল।