পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : তরফের মজুমদারদের কাহিনী শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩১৭ লক্ষ্মীপুরের দত্ত পুরকায়স্থ দত্তবংশীয়ের স্বস্থান ত্যাগ ও দেবানুগ্রহ মোসলমান রাজত্বকালে-যখন পশ্চিমবঙ্গের কেহ কেহ নানা কারণে স্বস্থান হইতে স্থানান্তরে গিয়া স্বীয় সুখসম্পদের সন্ধানে সচেষ্ট হন, তৎকালে রাঢ়দেশ বাসী জনৈক কায়স্থ সন্তান, একজন ব্রাহ্মণ অনুসঙ্গী ও একজন আচাৰ্য্য ও শূদ্র সহ স্বদেশ পরিত্যাগপূৰ্ব্বক প্রথমতঃ ঢাকায় ও তৎপরে তথা হইতে আরও পূৰ্ব্বাভিমুখে প্রস্থান করেন। একরাত্রে যখন পথশ্ৰান্ত কায়স্থটি গভীর নিদ্রাবিভূত হইয়া পড়িয়াছেন, তখন কে যেন তত্ৰত্য নিম্ববৃক্ষ মূল হইতে তাহাকে বলিতে লাগিল—“পথিক! আমায় এস্থান হইতে উদ্ধার কর, তোমার শুভ হইবে” । নিদ্রাভঙ্গে কায়স্থ সন্তান স্বগীয় সঙ্গিগণকে একথা বলিলে, কৌতুহলাক্রান্ত সকলেই সে বৃক্ষমূল খনন করিয়া এক সুন্দর শালগ্রাম চক্র প্রাপ্ত হইলেন। “আমার নাম শ্রীধর চক্র; তোমরা এখানে থাকিয়া আমার নামানুক্রমে নিজেদেরও এ স্থানের পরিচয় দিবে; তোমাদের শুভ সন্নিকট।" পরের রাত্রে কায়স্থ সন্তান পুনঃ ঈদৃশ স্বপ্ন দৃষ্টে সেই স্থানেই অবস্থিতি করিতে ইচ্ছা করিয়া সে স্থানকে শ্রীধরের নামানুসারে শ্রীধরপুর বলিয়া সংজ্ঞিত করিলেন। এ শ্রীধরপুর সতরশতী পরগণার অন্তর্গত। সুতরাং শ্রীধর চক্রের উদ্ধার ঘটনাদি সতরশতী পরগণায় অন্তর্গত। সুতরাং শ্রীধর চক্রের উদ্ধার ঘটনাদি সতরশতী পরগণায় সংঘটিত হয়। বলা বাহুল্য যে পূৰ্ব্বোক্ত পথিক সকলেই স্বপ্নে বিশ্বাস করিয়া আপনাদের নাম শ্রীধরপূৰ্ব্ব করিয়া লইলেন। তদনুসারে কায়স্থের নাম শ্রীধর দত্ত, ব্রাহ্মণের নাম শ্রীধর ভট্টাচাৰ্য্য, আচার্যের নাম শ্রীধরাচাৰ্য্য এবং শূদ্রের নাম শ্রীধর দাস হইল। শ্রীধরপুর বংশ শাখা সতরশতীর শ্রীধরপুরে নূতন বসতি স্থাপিত হইলে, যখন নবাব সরকার হইতে তহশীলদার সেই স্থানে আসিয়া করধাৰ্য্য করিতে প্রয়াসী হইলেন, শ্রীধরের সহিত তখন তাহার ঘোরতর বাদানুবাদ উপস্থিত হইল; এবং শ্রীধর তাহাকে অপমানিত করিতেও ক্রট করিলেন না; ফলে সেই কৰ্ম্মচারী চতুষ্পার্শ্ববৰ্ত্ত জলা জঙ্গলা অকৰ্ম্মণ্য অনাবাদী ভূমি শ্রীধরের অজ্ঞাতে তাহার নামে তৌজিভুক্ত করতঃ পাচশত কাহন জমা ধাৰ্য্য করিয়া, শ্রীধরকৃত অপমানের ইহাই প্রতিশোধ কল্পনায়, আত্মতৃপ্তি লাভ করিলেন। কিন্তু তৎকৃত অপমানের ইহাই প্রতিশোধ কল্পনায়, আত্মতৃপ্তি লাভ করিলেন। কিন্তু তৎকৃত এই অনিষ্টাচরণই কালে শ্রীধরের ইষ্টজনক হইয়া উঠিয়াছিল। যখন রাজস্ব সংগ্রাহক ব্যক্তিবর্গের মারফত সরকারী রাজস্ব সংগৃহীত হইবার প্রথা প্ৰবৰ্ত্তিত হয় এবং ইহাদের পদ “চৌধুরী" সংজ্ঞায় আখ্যাত হয়, তখন শ্রীধরের আধুষিত স্থানের সোম, নাগ ও কাজি বংশীয়গণ উক্ত পদ ও অভিধা গ্রহণেছু হইলেও তাহাদিগকে অতিক্রম করিয়া, নবাব যোগ্যতর শ্রীধরকে তত্ৰত “চৌধুরাই” সনন্দ দান করেন। পূৰ্ব্বকথিত তহশীলদার ঈর্ষাবশে শ্রীধরের নামে তথাকার জমাজমি তৌজিভুক্ত করিয়াছিলেন বলিয়া, চৌধুরাই সনন্দলাভে শ্রীধরের তাহাই ন্যায্য অধিকারের কারণ হইয়াছিল এবং সনন্দ লাভের সহায় স্বরূপ হইয়াছিল। বস্তুতঃ দৈব অনুকূল থাকিলে অশুভেও শুভ হয়। এইরূপে, শ্রীধর নবাগত হইলেও তত্ৰত্য প্রাচীন ও সম্মাননীয় সোম, রাগ ও কাজি বংশীয় ব্যক্তিবর্গকে অতিক্রম করিয়া “চৌধুরাই” প্রাপ্ত হইলে, তিনি তাহাকে বিদ্বেষ ভাজন হইয়া উঠিলেন। কিন্তু তিনি স্বীয় অতুল্য বুদ্ধি ও অজেয় পরাক্রমে সকল বিপদই অনায়াসে বিদূরীত করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন।১২