পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-প্রথম খণ্ড ছিলেন। হিরণ্যগর্ভ গৃহাগত মধুকর মিশ্রকে তাহার উপযুক্ত পাত্র স্থির করিয়া সেই অনিকেত পুরুষের সহিত স্বদুহিতার বিবাহ দিলেন, মধুকর গৃহবাসী হইলেন। আদিদেবের সময় হইতে তদ্বংশীয়গণ গঙ্গার প্রতি ভক্তিপরায়ণ ছিলেন। চণ্ডী সুবোধ মেয়ে, গঙ্গার প্রতি তাহার অচলা ভক্তি ছিল। তাহার ভক্তির গাঢ়তায়,— উপসনার তন্ময়তায় লোক বিস্মিত হইয়া যাইত, এ বিষয়ে একটা সুন্দর কাহিনী আছে। কথিত আছে, চণ্ডীর আরাধনায় গঙ্গা পরিতুষ্টা হন, তখন তৎপ্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে তাহারা স্ত্রী-স্বামীতে পশ্চাদৃষ্টি ব্যতিরেকে শঙ্খধ্বনি সহকারে বরচক্রতীরে প্রভাতে যতদূর অগ্রসর হইবেন, ততদূর পর্যন্ত তাহাদের অধিকারভুক্ত হইবে। পরদিন প্রত্যুষে শুদ্ধচিত্তে স্বামীসহকারে শঙ্খধ্বনি করিয়া চণ্ডীদেবী বরবক্রাভিমুখে চক্রাকারে পরিভ্রমণ করিলেন। হঠাৎ চঞ্চল প্রবাহের কুলুধ্বনি না শুনিয়া চণ্ডীদেবী পশ্চাতে চাহিবামাত্র স্রোত স্বাভাবিকরূপে দক্ষিণাভিমুখ হইল;— বরবক্র “চর" দিয়া সরিয়া যাইতেছিল, চণ্ডীর দৃষ্টিপাতে তাহা স্থগিত হইল, দৈবতঃ তাহদের অধিক ভূপ্রাপ্তি ঘটিল না। চণ্ডীদেবী গঙ্গার বরপ্রভাবে স্রোতঃপরিত্যক্ত ভূমি প্রাপ্ত হওযায়, ঐ ভূখণ্ড বরগঙ্গা নামে খ্যাত হয় ৬ বরগঙ্গা নাম প্রাপ্তির সময় হইতেই প্রাকৃতিক নিয়মে বরবক্রের গতি পরিবর্তিত হইতে থাকে, এবং এই সময়েই তাহা সুসম্পন্ন হয়। ফলতঃ বরবক্রের পরিত্যক্ত সেই ভূভাগই বরগঙ্গা নামে খ্যাতি লাভ করে। পরে চণ্ডীদেবীকে তদীয় পিতা কর্তৃক সেই ভূমিই প্রদত্ত হইয়াছিল। মধুকর পত্নীসহ বরগঙ্গাবাসী হইলেন। ৭ নদীর মধ্যে মধ্যে আবর্ত্তময় গভীর স্থানকে এদেশে "ডহর" বলা হয়। কথিত আছে তত্রত্য একটি ডহরেই ১৮৯২ খৃষ্টাব্দে চৈতন্য বাবু "শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্যেদয়াবলী" প্রকাশ কবেন। আমাদের প্রেরিত পুথি ব্যতীত তিনি অন্য একখানা পুথিও পাইয়াছিলেন, তাহার অবলম্বিত সেই পুঁথিতে "পাশ্চাত্য" পাঠ থাকাতে তিনি আমাদের প্রেরিত পুঁথির "দক্ষিণাত্য" পাঠ পাদটিকায় দেন। নগেন্দ্র বাবুও তাহার “বঙ্গের জাতীয় ইতিহাসে” এই দ্বিমতের উল্লেখ কবিয়াছেন । তদ্ব্যতীত প্রাচীন কবি জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল গ্রন্থে মধুকব মিশ্রকে স্পষ্টতঃ যাজপুরাগত বলা হইযাছে। “বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস" ২য় ভাগ ৩য় অংশের ১৯৬/১৯৭ পৃষ্ঠায় এ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা পূৰ্ব্বক গ্রন্থকার এই দ্বিমতের সামঞ্জস্য বিধান করিয়া লিখিয়াছেন, “জগন্নাথ মিশ্রের বহু পূৰ্ব্বেই যে বঙ্গে দাক্ষিণাত্য সংশ্ৰব ঘটিয়াছিল, পাশ্চাত্য বৈদিগ কুল গ্রন্থ হইতে তাহার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, পাঁচ শত বর্ষেরও পূৰ্ব্বে এ দেশে দক্ষিণাত্য বৈদিকের বাস ছিল " “পুনঃ” গঙ্গা বংশীয় রাজাদিগের সময়ে বহু ব্ৰাহ্মণ কান্যকুব্জ হইতে আসিয়া যাজপুরে বাস করেন। "শ্রীচৈতন্যের পূৰ্ব্বপুরুষ যাজপুধবাসী, সুতরাং তাহারা উত্তব শ্রেণী বা পঞ্চগৌড় ব্রাহ্মণের অন্তগতি হইতেছেন। গঙ্গবংশীয় রাজ কর্তৃক কনোজ হইতে ব্রাহ্মণ আনয়ন বাবদ যদি প্রকৃত হয়, তাহা হইলে যশোধরাদির ন্যায় তাহারাও পাশ্চাত্য বৈদিক হইতেছেন। আবার উৎকল বা দক্ষিণ দেশ হইতে শ্রীহট্টে আগমন প্রযুক্ত তাহারা দাক্ষিণাত্য বৈদিক বলিয়া গণ্য হইতে পারেন । এই কারণেই মহাপ্রভুর জীবনী তাহার পূৰ্ব্ব পুরুষকে কেহ “পাশ্চাত্য বৈদিক" কেহবা "দক্ষিণাত্য বৈদিক" বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। এইরূপ উভয়সমাজে কোন সময়ে সম্বন্ধ স্থাপন হওয়াও কিছু লিচিত্র নহে।" গ্রন্থকার বহু আনুষঙ্গিক উদাহরণ যোগে এই সামঞ্জস্য প্রদর্শন করিয়াছেন। কিন্তু এ দেশে এ বংশীযগণকে সকলেই পাশ্চাত্য বৈদিক বলিয়া জানে । “আসী শ্রীহট্ট মধ্যস্থ্যে মিশ্রোমধুকরাভিধঃ । পাশ্চাত্যে বৈদিকবিশ্বের তপস্বী বিজিতন্দ্ৰিয়ঃ। ববেণাস্তেল তেনেহ কিয়দ্ভুমিঃ করোৎকর । বরগঙ্গেত্যপোদেশঃ সুজন্যেঃ পরিগীনত্যে।" -শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী । ৭. ব্রাহ্মণের বসতি স্থান বড়গঙ্গা গ্রামে। বিয়া করি মধু মিশ্র রৈল সেই গ্রামে৷”- প্রেমলিসাল গ্রন্থ। $2.