পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম অধ্যায় মধুকর বংশ বর্ণন শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৪৭ চণ্ডীদেবী প্রথমে গঙ্গার দর্শন বা কৃপা নিদর্শন ও প্রতাদেশ প্রাপ্ত হন। এবং সেই জন্য তাহা “চণ্ডীডহর” নামেই খ্যাত আছে। চণ্ডীডহরের পশ্চিম "চণ্ডীপুর” গ্রাম হিরণ্যগৰ্ভ এই গ্রাম কন্যাকে দিয়াছিলেন। কিন্তু চণ্ডীদেবী চণ্ডীপুরে অবস্থিতি না করিয়া স্বামীর সহিত নিজ বুরুঙ্গাতেই বসতি করেন। বংশ বিস্তার কাল সহকারে চণ্ডীর গর্ভে মধুকরের চারিপুত্রের জন্ম হয় ৮ ইহাদের নাম কীৰ্ত্তিদ, রঙ্গদ, উপেন্দ্র ও কৃত্তিবাস এই চারি পুত্রের জন্মের পর চণ্ডী পুনৰ্ব্বার গর্ভবতী হন, কিন্তু সেবার মনুষ্য শিশুর পরিবৰ্ত্তে একটি সপশিশু জাত হয়। ধাৰ্ম্মিকা জননী ইহাকে ফেলিয়া না দিয়া দুগ্ধ দানে প্রতিপালন করিতেন । মধুকর মিশ্রের পুত্ৰগণ যখন প্রাপ্ত বয়স্ক হইয়া উঠিলেন, তখন তিনি তাহাদের বিবাহাদি দিয়া সাংসারিক সমস্ত ভার তাহাদের উপর ন্যস্ত করতঃ ধৰ্ম্ম-কৰ্ম্মে রত হইলেন । কথিত আছে যে এই সময় একদা কীৰ্ত্তিদ-পত্নী শাশুড়ীর আজ্ঞায় সপকে দুগ্ধ দিতে গিয়া তৎপ্রতি অত্যাচার করায় ফণী ক্রুদ্ধ হইয়া বনে চলিয়া যান, এই ঘটনার পর মধুকর মিশ্র ও চণ্ডীদেবী কাশীধামে গমন করেন ।১০ ১. কীৰ্ত্তিদ মিশ্রের পুত্রের নাম দিবাকর । কথিত আছে যে ফণীশাপে এই বংশীয়গণ সকলেই মূর্খ ও নিৰ্দ্ধন হয়। এই বংশীয়গণ বুরুঙ্গায় চক্ৰবৰ্ত্তী বংশ বলিয়া খ্যাত। একটি বিধবার আখ্যান ব্যতীত এ বংশের কোন কীৰ্ত্তি কথা জ্ঞাত হওয়া যায় না। ২. রঙ্গদ মিশ্রের পুত্রের নাম প্রভাকর। এ বংশীয়গণ ভট্টাচাৰ্য্য আখ্যাধারী। এ বংশের অনেকেই জ্ঞানগৌরবে গৌরবিত ও সাধন প্রভাবে মহীয়ান ছিলেন । ইহারা বুরুঙ্গা, রেঙ্গা ও ইন্দ্ৰেশ্বর বাসী । ৮ম শ্ৰীমন্মধুকর মিশ্রের বংশাবলী তালিকা ক, খ পরিশিষ্টে দ্রষ্টব্য। ৯. শ্রীচৈতন্য চবিতামৃত ও চৈতন্য ভাগবতাদি গ্রন্থের ও প্রাচীন বংশ তালিকা মতে উপেন্দ্র মিশ্রের ও তৎ পিতার নাম আমরা লিপিবদ্ধ করিলাম। উপেন্দ্র মিশ্রের পুত্রই জগন্নাথ মিশ্র কিন্তু অন্যান্য লেখকগণ ইহাদের নাম বিভিন্ন রূপে লিখিয়াছেন। বৈদিক কুলমঞ্জুরী ও কুল পঞ্জিকা মতে উপেন্দ্র মিশ্রের পিতার নাম মধুকর স্থলে যদুনাথ লিখিত হইয়াছে, তাহার দশম পুরুষ উদ্ধে কনোজা রমানাথের পুত্র শ্রীমানকে ইহাব পূৰ্ব্বপুরুষ বলা গিয়াছে। কিন্তু গোপীনাথ কণ্ঠাভরণ মতে উপেন্দ্র নামেব স্থলে বমাপতি ও তৎপিতা মধুকরের নাম শিবরাম বলা হইয়াছে এবং তাহাকে পূৰ্ব্বোক্ত শ্রীমান বংশ্য না বলিয়া, শ্রীমানেব ভ্রাতা জিতামিশ্রেব বংশীয বলিয়া প্রকাশ করা হইয়াছে!! আবার কবি জয়ানন্দের মতে উপেন্দ্র মিশ্রেব নাম জনাৰ্দ্দন ও তৎপিতা মধুকর ধনঞ্জয় হইয়া গিয়াছেন!!! এরূপ বৈষম্যের কারণ কি? শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ সম্বন্ধেই যখন এরূপ, তখন বঙ্গেব সামাজিক ইতিহাসে সত্য প্রকটন কিরূপ দুরূহ যে, মধুকর মিশ্ৰইহাই বোধ হয় যে, মধুকর মিশ্র শ্রীহট্টে নবাগত: স্থানান্তরে তাহার অন্য নাম থাকা অসম্ভব নহে এবং শ্রীহট্টে তিনি মধুকর নামেই পরিচিত হন । পক্ষান্তরে অন্যান্য কুলগ্রন্থ রচয়িতাদেব ভ্রম হওয়াও বিচিত্র নহে; ভ্রম না হইলে বিভিন্ন কুলগ্রন্থে বিভিন্ন নাম থাকা অসম্ভব হইত। জয়ানন্দের ভ্রম স্পষ্টতঃ দেখা যায় । তিনি উপেন্দ্র নামই উল্লেখ করেন নাই। এস্থলে উপেন্দ্র মিশ্রের পৌত্র প্রদুম মিশ্র, ও গৌরপার্ষদ মুরারি গুপ্তের মত এবং প্রেমবিলাসাদি অন্যান্য প্রমাণ্য বৈষ্ণব গ্রন্থের বিবরণ গ্রহণ করাই সঙ্গত। বংশ তালিকায়ও তাহার সহিত ঐক্য হয়। পরবর্তী ৩য অধ্যায়ে উপেন্দ্র মিশ্রের বংশ কথা দ্রষ্টব্য । ১০. "তবে মধুকর মিশ্র চণ্ডিকা সহিতে । পুত্ৰগণে রাজ্য দিয়া গেলেন কাশীতে।" —শ্রীচৈতনা রত্নাবলী ।