পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় অধ্যায় রঙ্গদ বংশ বর্ণন পরগণা- বুরুঙ্গা শ্ৰীমন্মধুকর মিশ্রের ২য় পুত্র রঙ্গদ মিশ্র শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতামহের অগ্রজ, তদ্বংশ বর্ণনের পূৰ্ব্বে আমরা শ্রীচৈতন্য চন্দ্রের পবিত্র নাম স্মরণ করিতেছি। শ্ৰীমদুপেন্দ্র মিশ্রের তৃতীয় পুত্র জগন্নাথ মিশ্র নবদ্বীপে বাস করিতেন, শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু তাহারই পুত্ররূপে ধরা পবিত্র করেন। তাহাকে দেখিবার জন্য তদীয় পিতামহীর অত্যন্ত অভিলাষ ছিল; সেই সূত্রে শ্ৰীমহাপ্ৰভু শ্রীহট্টে আগমন করিয়াছিলেন ।১ রামার কথা শ্ৰীমহাপ্রভু পিতামহী সম্মিলনে চলিয়াছেন। পথেই বুরুঙ্গ; এই স্থানে তাহার পিতামহ জন্মগ্রহণ করেন, এই স্থান তাহার জ্ঞাতিবর্গের দ্বারা অধুষিত। তিনি বুরুঙ্গায় উপস্থিত হইয়া কাহারও বাড়ীতে প্রথমে গমন করেন নাই। একটি শীতল ছায়া বিশিষ্ট অশ্বথ তলায় উপবেশ করিয়া শ্ৰান্তিদূর করিতেছিলেন। বসন্তকাল— প্রকৃতি নব সাজে সজ্জিত হইয়াছেন; শীতের নীহারদগ্ধ পাদপরাজি বাসন্তিক বায়ু হিল্লোলে যেন প্রাণ প্রাপ্ত হইয়াছে,– নবীন কিসলয়ে লতাবিতান সজ্জিত হইয়াছেন— স্তবকে স্তবকে কুসুম গুচ্ছ ঝুলিয়া রহিয়াছে। সে এক গ্রাম্য পুষ্করিণীর প্রান্তবর্তী বৃক্ষবাটিকা। সেই বনাচ্ছন্ন ভূমে দুই একটি গাভী চরিতেছিল, দুই একটি দৈয়ল তরুশাখে বসিয়া সঙ্গীত ঝঙ্করে মধুবর্ষণ করিতেছিল, এমনই সময় শ্ৰীমহাপ্ৰভু সেই অশ্বথ তলায় উপবেশন পূর্বক শ্রান্তি দূর করিতেছিল। তাহার আগমনে সেই অশ্বথ তলায় কি এক বিমল লাবণ্য ফুটিয়া উঠিল, যমুনা-সৈকতে নীপমূলে যখন শ্যামসুন্দরের শ্যাম লাবণ্য-লীলা প্রকটিত হইত, বুঝিবা এমনই সুন্দর দেখাইত! মধ্যাহ্নকাল, প্রখর রৌদ্র বা ঝা করিতেছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু অশ্বথের শীতল ছায়াতলে বসিয়া হরিনাম করিতেছেন। তদীয় অঙ্গের গৌরকান্তিতে অশ্বথ-তল হাসিতেছে, শুভ্র শ্রী স্বরূপ ধরিয়া যেন অশ্বথ তলায় বিমল লাবণ্যের লীলা-লহরী বিস্তার করিতেছে। প্রখর সুতীব্র রৌদ্র, কিন্তু সে স্থানে যেন চন্দ্রকরোজ্জল স্নিগ্ধতা। জ্বালাময় রৌদ্র-তাপ-প্রতাপে প্রাণীমাত্রই যখন পরিতাপিত হইতেছে, প্ৰভু দেখিতে পাইলেন যে, তখন একটি কৃষক সন্নিকটে চাষ করিতেছে। “জীবে দয়া” যাহার প্রচারিত ধৰ্ম্মের প্রথম সূত্র, তিনি নিরীহ গো-জাতির প্রতি ঈদৃশ অত্যাচার সহ্য করিতে পারিলেন না; জিজ্ঞাসা করিলেন– “কৃষক! তোমার নাম কি?” ১. শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দুইবার শ্রীহট্টে আগমনের সংবাদ প্রাপ্ত হওয়া যায়; একবার সন্ন্যাস গ্রহণের পূৰ্ব্বে পূৰ্ব্ববঙ্গ ভ্রমণোপলক্ষে । তখন শ্রীহট্টের বুরুঙ্গা পর্যন্ত আগমন করিয়াছিলেন এবং তথা হইতে নবদ্বীপে ফিরিয়া গিয়াছিলেন । এই উত্তরাংশে উপসংহারাধ্যায়ে শ্রীচৈতন্যচরিতে তাহা বর্ণিত হইয়াছে । তদন্তস্তর সন্ন্যাসান্তে তিনি পিতামহী সম্মিলনে পুনৰ্ব্বার বুরুঙ্গা হইয়া ঢাকাদক্ষিণে গমন করেন। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-তৃতীয় ভাগ)-৪