পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ সঙ্গত বোধ হয়, তাহা লিপিবদ্ধ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে। ইতিহাস লেখা আমার উদ্দেশ্য নহে।’ ইহাতে এইমাত্র প্রতীত হইতেছে যে রঘুনন্দনের সম্পর্কে উপরিভাগে যাহা উদ্ধৃত হইয়াছে, তাহার ঐতিহাসিক মূল্য বড় বেশী নয়।” “মহামহোপাধ্যায় পূজ্যপাদ শ্রীযুক্ত চন্দ্ৰকান্ত তর্কালঙ্কার মহাশয়১১৫ তদীয় “উদ্বাহ চন্দ্রালোকের” “বিজ্ঞাপন” প্রবন্ধে লিখিয়াছেন “পূজ্যপাদ মহামহোপাধ্যায় রঘুনন্দন ভট্টাচাৰ্য্য বন্দ্যঘটার বংশং পূৰ্ব্ববঙ্গ প্রদেশঞ্জ জন্মনালস্কৃতবন্তঃ। অদ্যাপি পূৰ্ব্ববঙ্গপ্রদেশে তেষাং বংশ্যাঃ সন্তি। পরতন্তু তেষাং নিরাসো নবদ্বীপে জাত ইতি কিংবদন্তী।’ ইত্যাদি।” “শৈশবে পাঠ্যাবস্থায় একদা দৈববাণীর ন্যায় শুনিয়াছিলাম, রঘুনাথের জন্মভূমি শ্রীহট্ট জিলার হবিগঞ্জ উপরিভাগেস্থ নবিগঞ্জ থানার নিকটবৰ্ত্তী মান্দারকান্দি নামক গ্রাম। মান্দারকান্দি গ্রামটিতে গিয়া খুঁজ করা হইয়াছিল। কিন্তু কেহ কিছু বলিতে পারিল না। কিন্তু ইহাতে আমার বাল্যকাললব্ধ ধারণাটি দূর হইল না।” “অদ্য প্রায় চারি শতাব্দী অতীত হইল, রঘুনন্দন আবির্ভূত হইয়াছিলেন। এতদিন পরে তাহার জন্মভূমিতে কেহ তাহার সংবাদ রাখিবে এইদেশে এমনটি আশা করা বৃথা। তাহার বংশীয়েরা, পূজনীয় তর্কালঙ্কার মহাশয় কথিত শ্রীহট্টের তথা পূৰ্ব্ববঙ্গের অন্যত্র অবশ্যই আছেন, ইহাতে অসম্ভাব্যতা কিছুই নাই বরং প্রতিপোষক আর একটি উদাহরণ শ্রীহট্ট হইতেই দিতেছি।” “শ্রীমদদ্বৈত প্রভু শ্রীহট্টের লাউড় রাজ্যে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সেও আজ পাঁচ শতাব্দীর কথা। আজ যদি অদ্বৈত প্রকাশ প্রভৃতি প্রামান্য গ্রন্থে এই কথাটির উল্লেখ না থাকিত, তবে কি শ্রীহট্টভূমি শ্ৰীমদদ্বৈতাচার্য্যের জন্মস্থান বলিয়া গৌরব করিতে পারিত?" “তবে কি শ্রীহট্ট রঘুনন্দনের জন্মভূমি নয়? মান্দারকান্দি গ্রাম সম্বন্ধে প্রমাণ পাওয়া দুর্ঘট হইতে পারে, কিন্তু শ্রীহট্টই যে রঘুন্দনের জন্মস্থান, এই বিষয়ে সন্দেহ করিবার কোনও কারণ দেখা যায় না। শ্রীহট্ট কিছুদিন আসামভুক্ত হইয়া থাকিলেও ইহা পূৰ্ব্ববঙ্গেরই একটা প্রকৃষ্ট অংশ; সুতরাং আমার এই ধারণা পূজ্যপাদ তর্কালঙ্ককার মহাশয়ের মতদ্বারা সম্পূর্ণ সমর্থিত হইতেছে।" “এই সিদ্ধান্তের সমর্থক অবান্তর আরও প্রমাণ আছে। শ্রীচৈতন্য ও রঘুনাথ সমপাঠী ছিলেন—উভয়ে সৌহাৰ্দ্দও বিলক্ষণ ছিল এবং ইহারা উভয়েই শ্রীহট্টীয় সুতরাং এক সমাজভুক্ত ছিলেন বলিয়াই বোধ হয় তাহাদের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠতা ছিল। রঘুনন্দন বোধ হয় ইহাদের বয়ঃকনিষ্ঠ, অতএব অল্পবয়সে শ্রীচৈতন্যদেব সন্ন্যাস গ্রহণপূৰ্ব্বক নবদ্বীপ পরিত্যাগ করাতে তদীয় জীবন চরিতে রঘুনন্দনের কোন উল্লেখ পাওয়া যাইতেছে না, কিন্তু শ্রীচৈতন্যদেবের নবদ্বীপ পরিত্যাগের পরে যখন রঘুনাথ মধ্যাহ্ন-মাওঁণ্ডের ন্যায় নবদ্বীপাকাশে দেদীপ্যমান ছিলেন, তখন রঘুনন্দনকে তদীয় সম্পর্কে আসিতে দেখিতেছি। “নবদ্বীপ মহিমা” হইতেই তৎসম্বন্ধে একটা গল্প উদ্ধার করিলামঃ—“কথিত আছে রঘুনন্দন আপন পুত্রের উপনয়ন স্বমতে প্রদান করিয়াছিলেন। ঐ উপনয়নের পর তাহার পুত্র কোনও কৰ্ম্মোপলক্ষে রঘুনাথ শিরোমণিকে নিমন্ত্ৰণ করিতে গিয়া প্রথানুসারে তাহাকে নমস্কার করেন। কিন্তু শিরোমণি একটু চিন্তা করিয়া প্রতি নমস্কার করিলেন না। বালক পিতৃসন্নিধানে উপস্থিত হইয়া কহিলেন যে জেঠা মহাশয়কে নমস্কার করিলাম কিন্তু তিনি প্রতি নমস্কার করিলেন না। রঘুনন্দন শুনিয়া দুঃখিত হইলেন। যথাসময়ে শিরোমনি উপস্থিত হইলে রঘুনন্দন তাহাকে প্রতি নমস্কার না করিবার কারণ জিজ্ঞাসা ১১৫. এই প্রবন্ধটী শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ এম এ, মহোদয় কর্তৃক ১৩১৫ সালের অগ্রহায়ণ সংখ্যা নব্যভারতে প্রকাশিত হয়; সেই প্রবন্ধ হইতে কিয়োদংশ এ স্থলে উদ্ধৃত হইল। যখন প্রবন্ধটা প্রকাশিত হয় তৎকালে তর্কালঙ্কার মহাশয় জীবিত ছিলেন এবং নব্যভারতে প্রবন্ধ দিবার পূৰ্ব্বে লেখক কর্তৃক তাহাকে শুনান হইয়াছিল।