পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ কর মোহাম্মদ চৌধুরীর৯৩০ সহিত সাক্ষাৎ করিতে গমন করেন। চৌধুরী তখন অন্দরে ছিলেন। ভৃত্য রাজারামের আগমন সংবাদ তাঁহাকে জ্ঞাপন করিলে, তিনি অপেক্ষা করিতে বলিলেন। রাজারাম তদানুসারে বহুক্ষণ অপেক্ষা করিয়াও, চৌধুরী আসিতেছেন না দেখিয়া চলিয়া আসিলেন। এদিকে চৌধুরী বাহিরে আসিয়া যখন জানিলেন যে রাজারাম চলিয়া গিয়াছেন, তখন তাহার ক্রোধের সীমা রহিল না, তিনি আপনাকে অপমানিত জ্ঞান করিয়া তখনই রাজারামকে ফিরাইয়া আনিতে ভৃত্যকে পাঠাইলেন। আদিষ্ট হইয়া ভৃত্য অনতিবিলম্বে রাজারামকে পথ হইতে ফিরাইয়া আনিল। রাজারামের আগমন সংবাদপ্রাপ্তে চৌধুরীও তাঁহাকে বুঝিতে পারিয়া, ভৃত্যদ্বারা রাজারামকে এক গুপ্ত পথে পলায়নের পরামর্শ দিলে, রাজারাম তৎক্ষণাৎ পলায়নপূৰ্ব্বক বাড়ীতে আসিলেন ও সেইক্ষণেই কাৰ্য্যস্থলে চলিয়া গেলেন। নবাব রফিউল্লা খা বাহাদুর দেওয়ানকে বিষন্নচিত্ত ও বিদায় ভোগের পূৰ্ব্বেই প্রত্যাগমন করিতে দেখিয়া কারণ জিজ্ঞাসিলে, তিনি সমস্তই নবাবের গোচর করিলেন এবং সাধারণের প্রতি কর মোহাম্মদের অত্যাচার বর্ণনপূৰ্ব্বক প্রতীকারপ্রার্থ হইলেন; অধিকন্তু নবাবের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিয়া স্বীয় বাসভূমি ডৌয়াদি হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া লইতে প্রার্থনা করিলেন। নবাব রাজারামের প্রার্থনা পূর্ণ করিতে সম্মত হইলেন, এবং কর মোহাম্মদের অধিকৃত ডোয়াদি পরগণা হইতে, রাজারামের বাসভূমি সম্বলিত একটি পৃথক পরগণা খারিজ করিয়া দিলেন; নবাব রফিউল্লা খাঁর নামে ঐ নূতন পরগণা "রফিনগর” নাম প্রাপ্ত হইল। রাজারামের অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল বটে, কিন্তু তাহার ভাগ্য বিপৰ্য্যয়ের কাল উপস্থিত হইয়াছিল, তাই নবাবও তাহাকে একটা কঠিন সমস্যায় ফেলিলেন। বলা গিয়াছে যে রাজারাম পারস্য ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন, তদুল্লেখে নবাব বলিলেন—“দেওয়ানজি, পারস্য ভাষায় আপনার যেরূপ প্রগাঢ় জ্ঞান, উহা মোসলমানের পক্ষেও শোভনীয়। আমার ইচ্ছা, আমার দানের প্রতিদান স্বরূপ আপনে ইসলাম ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইয়া আমার কাছে অবস্থিতি করেন।” নবাবের ঈদৃশ্য বাক্য শ্রবণে রাজারাম কিংকৰ্ত্তব্য বিমূঢ় হইলেন, তিনি বুঝিলেন যে তত সহজে নবাবের অনুগ্রহ লাভের কারণ ইহাই। যাহাহউক, তিনি নবাবের বাক্যে অস্বীকৃত হইয়া বিপদ ঘনীভূত করিতে ইচ্ছা করিলেন না—ইসলাম-ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইয়া মোহাম্মদ রজা নামে সংজ্ঞিত হইলেন ও রফিনগরের “চৌধুরাই” সনন্দ পাইলেন। মোসলমান ধৰ্ম্ম অবলম্বনের পর রাজারাম আর গৃহে গেলেন না, পরে এক সময় দেশে আসিয়া পুষ্করিনীর তীরে এক গৃহ নিৰ্ম্মাণ করিয়া তথায়ই অবস্থিতি করিলেন। এই সময়ে একদিন তাহার স্ত্রী সাহেবরাম ও বদলরাম নামক পুত্রদ্বয়কে লইয়া স্বামীর কাছে গিয়া পদতলে লুষ্ঠিত হইলেন। তখন স্বামী স্ত্রীকে বলিলেন—“সাধ্বি, তোমার পতি কর মোহাম্মদের সহিত বিবাদে নিহত হইয়াছে তুমি এখন বৈধব্যাবলম্বনে পুত্রদ্বয় সহ স্বধৰ্ম্ম পালন কর। এই অনাথ বালকদ্বয় যাহাতে কোন অসুবিধায় পতিত না হয়, আমি তাহা করিব।” “আমার স্বধৰ্ম্ম পালন ইহাই” এই বলিয়া তখন পুত্রদ্বয় সহ রাজারামপত্নী ধৰ্ম্মত্যাগী পতির পরিত্যক্ত উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করিয়া ফেলিলেন। রাজারাম তখন নিরূপায় হইয়া পুত্রদ্বয় সহ পত্নীকে ইসলাম ধৰ্ম্মে দীক্ষিত করিলে, পুত্রদ্বয় যথাক্রমে সাহেবউদ্দীন ও বদরউদ্দীন নামে সংজ্ঞিত হইলেন। ইহাদের উভয়ের নামেই রফিনগরে দুইটি দশসনা তালুক (তাং সাহেবদী ও বদরদী) আছে । ১৩০. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৩য় ভাঃ ২য় খঃ ৫ম অঃ ডেীয়াদির বিবরণে ইহার বিষয় বলা হইয়াছে।