পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১১৯ আন্দাজ দূরে গিয়া বসিয়া রহিলে, বলিলেন “বেটা রক্ষা পাইলে।" ইহার কিছুক্ষণ পরে সকলে চলিয়া গেলে, নরসিংহপুরের লোকেরাও যাইতে ইচ্ছা করিল, কিন্তু তিনি যাইতে দিলেন না, সমস্ত রাত্রি তাহাদের কাছে শনির পাচালির কথা কহিয়া কাটাইলেন। পরদিন তাহারা বাড়ীতে গিয়া ভাবিল যে তাহাদের মধ্যে কাহারও গ্রহদোষ থাকিতে পারে। এইরূপ তখন কোষ্ঠী বিচারে দেখা গেল যে, প্রহৃত ব্যক্তির রাশিতে শনির দৃষ্টি আছে। ইহার কিছুদিন পরে, কাৰ্য্যবশতঃ সেই ব্যক্তি মাঠে গেলে, হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি আরম্ভ হয়, বিদ্যুৎ চমকিতে থাকে। একবার তীব্ৰতেজে বিদ্যুৎ ছুটিল, সে ব্যক্তি ভয়ে দৌড়িয়া দুইনল আন্দাজ যাইতে না যাইতেই সেই স্থান বজ্রাঘাতে দুইটি মহিষ মৃত্যুমুখে পতিত হইল। এতদৃষ্টে সে ব্যক্তি বুঝিতে পারিল যে কেন সাধু তাহাকে প্রহার করিয়া দুইনল দূরে তাড়াইয়া দিয়াছিলেন। লোকের প্রদত্ত দ্রব্য প্রায়শঃ তিনি বিলাইয়া দিতেন। একদা কয়েকটি দসু্য তাহাকে “মারধর" করিয়া কতক দ্রব্য লইয়া যায়। জনৈক পোলিশ কৰ্ম্মচারী কোনও প্রকারে ইহা জানিতে পারিয়া, তাহাকে সেই সকল লোকের নাম বলিয়া দিতে অনুরোধ করে। তিনি হাসিয়া উত্তর দেন “তুমিই” মারিয়া ধন নিয়াছ। পোলিশ কর্মচারী প্রকৃত তথ্য না পাইয়া ফিরিয়া যাইতে বাধ্য হন। জনৈক আত্মীয়ের মুখে শুনিয়াছিলাম, একদা তিনি কোন কার্যোপক্ষে শ্রীহট্ট শহরে যাওয়া কালে, নৌকা হইতে ইহাকে দেখিতে গিয়াছিলেন। তাহার হাতে একটা রূপার বাধা হুক্কায় তামাক সাজা ছিল এবং খাইতে খাইতে গিয়াছিলেন। রাখাল শাহ হুক্কাটি চাহিয়া লন। শ্রীহট্টে গেলে তাহার কার্য্যটি অল্পায়াসে সুসিদ্ধ হওয়ায়, তিনি প্রত্যাগমন কালেও সাধুকে দেখিতে যান। হুক্কাটি দেখিতে না পাইয়া এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসায় জানিলেন যে চাহিদা নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সাধু তাহা অপর ব্যক্তিকে দিয়াছিলেন। আত্মীয় নৌকায় ফিরিবার কালে প্রবল বেড়ে ঝড় বৃষ্টি আরম্ভ হয়, তখন তিনি পশ্চাৎ দিকে ফিরিয়া চাহিয়া দেখিতে পান যে, যে স্থানে সাধু বসিয়া রহিয়াছেন, তাহার কিছুটা স্থান ধরিয়া বারিপাত হইতেছে না। রাখাল শাহের মৃত্যু আশ্চর্য রকমে হইয়াছিল। একদিন তিনি নিকটস্থ লোকদিগকে সংকীৰ্ত্তন করিতে বলেন, তিনি কখনও কীৰ্ত্তনাদি করিতেন না, তাহার স্থানে কীৰ্ত্তন সেই প্রথম ও শেষ। হিন্দুগণ পরম উৎসাহে কীৰ্ত্তন আরম্ভ করিলে, তিনি কীৰ্ত্তনের মণ্ডলী মধ্যে আসন করিয়া বসিলেন ও দেখিতে দেখিতে সেই আসনোপাবিষ্ট অবস্থাতেই দেহত্যাগ করিলেন। লোকে হাহাকার করিয়া উঠিল ও তাহার দেহ “সমাধি” দিল। আশ্চর্য্যের বিষয়, শুনা যায় যে ইহার ১২ দিন পরে তাহাকে অন্যত্র অনেকেই দেখিতে পাইয়াছিল এবং সে আতিবাহিক দেহ সত্বরেই দৃষ্টি বহির্ভূত হইয়াছিল। কানাইর ঘাটে তিনি প্রায় ত্রিশ বৎসর কাল ছিলেন, মধ্যে কিছুদিনের জন্য “মোগলের চক" নামক স্থানে গিয়াছিলেন। ২০/২২ বৎসর হইল, তিনি দেহত্যাগ করিয়াছেন। রাখাল শাহকে হিন্দু মোসলমান উভয় সম্প্রদায়ই শ্রদ্ধা করিত। মোসলমানগণ তাহাকে মোসলমান মনে করিত, হিন্দুগণ সিদ্ধপুরুষ বলিয়া ভক্তি করিত। রাজারাম দত্ত শ্রীহট্টের নবাব রফিউল্লা খা বাহাদুরের সময়ে (১১০০ সনে) দত্তগ্রামের দত্তবংশীয় পারস্য ভাষাবিৎ রাজারাম উক্ত নবাবের দেওয়ান নিযুক্ত হইয়াছিলেন। তাহার কার্য্যতৎপরতায় নবাব প্রীত ছিলেন, তিনি একদা বিদায় গ্রহণে বাড়ীতে আগমন করেন, এবং ডেীয়াদির প্রবল প্রতাপ