পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জীবন বৃত্তান্ত শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১২৯ কাব্য কবির বাল্যরচিত “দাতাকর্ণের" পাণ্ডুলিপি লোপ পাইয়াছে। তদ্ব্যতীত “নিমাই সন্ন্যাস" “সীতার বনবাস” “বিজয় বসন্ত” নামক আরও তিনখানা যাত্রার পালার নাম শুনা যায় ॥১৩৩ রামকৃষ্ণ গোসাঞি রিচি পরগণাবাসী দাসবংশীয় বনমালী অপুত্রক ছিলেন, পত্নী জাহ্নবীর সহিত শ্ৰীক্ষেত্রে গমন করিয়া পুত্ৰকামনা করেন। শ্ৰীক্ষেত্র হইতে চলিয়া আসিলেই জাহ্নবীর গর্ভলক্ষণ প্রকাশ পায়, সেই গর্ভে ৯৮৩ বাং১৩৪ রামকৃষ্ণের জন্ম হয়। রামকৃষ্ণের বয়স যখন তিন বৎসর মাত্র, সেই সময় তাহার মাতৃবিয়োগ হয়। রামকৃষ্ণ পিতা কর্তৃক পালিত হইয়া গ্রাম্য পাঠশালে প্রবিষ্ট হন ও বাঙ্গালা ভাষা শিক্ষা করিতে আরম্ভ করেন। রামকৃষ্ণের বুদ্ধি অতি চমৎকার, বুদ্ধির তীক্ষতায় সকলই মোহিত হইয়া প্রশংসা করিত। যখন রামকৃষ্ণের বয়স ত্রয়োদশ বৎসর তখন তাহার পিতৃবিয়োগ হয়; নিরাশ্রয় রামকৃষ্ণ তখন স্বগ্রামবাসী মাতুলের প্রতিপাল্য হইয়া উঠেন। যখন রামকৃষ্ণ ষোড়শবর্ষে পদার্পণ করেন, তখন মাছুলিয়া আখড়াবাসী জগন্মোহন সম্প্রদায়ী শান্তগোসাঞি১৩৫ রিচিতে জনৈক শিষ্যগৃহে উপনীত হইয়াছিলেন। শান্ত গোসাঞি পরম ধাৰ্ম্মিক ও সদাশয় ব্যক্তি ছিলেন। ইনি রিচি অবস্থিতিকালে ইহাকে দেখিতে অনেকেই যাইত, তাহাদের সহিত একদিন বামকৃষ্ণ গমন করিয়াছিলেন। বালক রামকৃষ্ণের সরল সুন্দর চেহারা শান্তগোসাঞির দৃষ্টি আকর্ষণ করিল; তিনি ইহার পরিচয় জিজ্ঞাসিলেন, রামকৃষ্ণ নিজ পরিচয় দিয়া তদীয় আশ্রয় ও কৃপাপ্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা করিলেন। রামকৃষ্ণের কথায় তিনি বিগলিত হইয়া মাছুলিয়ার আখড়াতে তাহাকে যাইতে বলিলেন । পিতৃমাতৃহীন রামকৃষ্ণ সংসারের অনিত্যতা ও নিৰ্ম্মমতায় সংসারের প্রতি সেই বয়সেই বীতশ্রদ্ধ হইয়া উঠিয়াছিলেন। রামকৃষ্ণ ৯৯৯ বাংলায় মাছুলিয়ার আখড়াতে গিয়া শান্তগোষাঞি হইতে ভেখ আশ্রয় করিলেন। বেশ মধ্যে মাথায় টুপর বা “টুপ” ও খিলকা এবং তিলক মালা ধারণে আদেশ পাইলেন। সন্ধ্যায় “নিৰ্ব্বাণ সঙ্গীত” গাইয়া পরে “সাধো” এবং ব্রহ্মকি বাণী গুরুসত্য” বলিয়া জয়ধ্বনি করিতে উপদিষ্ট হইলেন। আমিষবৰ্জ্জন ও স্ত্রীসঙ্গত্যাগে বিশেষরূপে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইতে হইল। এইরূপে রামকৃষ্ণ গুরুর উপদেশ অনুসারে সাধনে প্রবৃত্ত হইলেন ও দ্বাদশ বৎসর (১০১১ বাং পৰ্য্যন্ত) এই স্থানে থাকিয়া ভজন করিলেন। এই সময় তিনি স্বয়ং সঙ্গীত রচনা করিয়া গান ও ভজন করিতেন, তৎকৃত দুইটি “নিৰ্ব্বান সঙ্গীত" এই ঃ– ১ । “তোমারে আমি ভজিব কেমনে, ও নাথ! তোমারে আমি ভজিব কেমনে। ধ্ৰু । অক্ষর নির্ণয় নাই, জপ তবে নাহি পাই, রূপ বর্ণ না দেখি নয়নে নিমিষেতে না রবে সকল । তুমি প্রভু দয়াময়, লীলা তব না বুঝিয়ে, ১৩৩. শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত পদ্মনাথ ভট্টাচাৰ্য্য বিদ্যাবিনোদ মহোদয়ের প্রযত্নে শ্রীহট্ট গৌরব চিত্রাবলী সংরক্ষিত হইয়াছে, তনধ্যে ইহার চিত্র অন্যতম । ১৩৪. এই তারিখটা কবিরদাস বৈষ্ণব লিখিত "শ্রীশ্রীবামকৃষ্ণ চরিত হইতে প্রাপ্ত। ১৩৫. এই ৪র্থ ভাগে জগনোহনের জীবন চরিত দ্রষ্টব্য। শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত(উত্তরাংশ-চতুর্থ ভাগ)-৯