পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>W)Wり শ্রীহট্টের ইতিবৃ 3 চতুর্থ ভাগ ব্যাপার উপস্থিত হয়। যখন সপ্তপ্রদক্ষিণ হইবে, তখন একটা ঘটনা উপস্থিত হয়, তখন হঠাৎ তিনি কোথায় চলিয়া যাওয়ায়, সকলেই উৎকণ্ঠিত হইয়া পড়েন। অনেক অনুসন্ধানেও তাহাকে পাওয়া গেল না, কিন্তু কতক্ষণ পরে তিনি আপনিই আসিয়া উপস্থিত হইলেন। জিজ্ঞাসায় জানা গেল যে তাহার নিরুপিত জপকাল উপস্থিত হওয়ায় তাহাকে যাইতে হইয়াছিল। শ্বশুর জামাতার এই কাণ্ডদর্শনে তাহাকে কাণ্ডজ্ঞানহীন পাগল মনে করিয়া বিষাদিত হইয়াছিলেন কিন্তু ভব্য ব্যক্তিবর্গের কথায় তাহাকে “সিদ্ধপুরুষ” জানিয়া আশ্বস্ত হন। একদা ছাতিআইনে একটা বন্যহস্তী সমাগত হইয়া লোকের ভীতি উৎপাদন করে: উপায়ান্তরহীন ও একান্ত ভীত হইয়া বহু ব্যক্তি রুদ্রদেবকে ইহা জানাইলে, তিনি আড়াই হাত মাত্র লম্বা একটি লাঠি তাহাদিগকে দিয়া তদ্বারা হাতী তাড়াইতে অনুমতি দিলেন। লোকেরা কেহই হাতী তাড়াইতে সাহসী হইল না, তখন তিনি স্বয়ং হাতীর কাছে গিয়া বলিলেন “বাবা, যে পথে আসিয়াছ, চলিয়া যাও।” সাধু এই কথা যেমন বলিলেন, কথিত আছে যে হাতীটা অমনি চলিয়া গেল । সাধুর ইচ্ছাশক্তির ও আদেশের ক্ষমতা দেখিয়া দর্শকগণ ভক্তিপুতচিতে তাহাকে প্রণাম করিল ও তদবধি তাহাকে সকলে “মুনিগোসাঞি" বলিয়া আখ্যাত করিল। মুনিগোসাঞি শেষটা বসন পরিধান করিতেন না, দিনের বেলায় একখানা মোটা গিলাপ গায় দিয়া রাখতেন, ইহা হাটু পর্যন্ত পড়িত, রাত্রে কিছুই গায় থাকিত না, ও উলঙ্গাবস্থায় শ্মশানে গিয়া জপ করিতেন। ত্রিপুরাধিপতি মহারাজ গঙ্গাধর মাণিক্যের বিশেষ প্রার্থনা তদত্ত একটা বড় ঝারি (গাড় ) তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন ও তাহা ব্যবহার করিতেন । ইহার জল, সকলের সকল প্রকার রোগে, প্রার্থীকে ব্যবহার করিতে দিনেন ও তাহাতেই তাহারা নিরাময় হইত। কখন কখন তাহাকে পদ্মপত্রে উপবিষ্ট হইয়া জপকরিতে দেখা যাইত। তখন তাহার দেহ অসম্ভব লঘু হইয়া যাইত। ইহা শুনিতে অসম্ভব বোধহয় বটে, কিন্তু সাধকপুরুষদের ব্যবহার পক্ষে কোনরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিতে যাওয়া সুযুক্তিসিদ্ধ বোধ হয় না ১৪৩ রুদ্রদেব ১০৫ বৎসর জীবিত ছিলেন, ১৮৩৮ খৃষ্টাব্দে জীবিত তিনি দেহত্যাগ করেন। লব কিশোর দাস ত্রিপুরার অন্তর্গত ধরমণ্ডলের ধরবংশীয় একব্যক্তি পূৰ্ব্বে পঞ্চখণ্ডে আগমন করিয়াছিলেন, তিনি শিকারে গিয়া সন্নিকটবৰ্ত্ত গ্রামবাসী সাহুকুলোৎপন্না রূপ লাবণ্যশীলা এক বালিকাকে জল আহরণে আসিতে দেখিতে পান। তিনি তৃষ্ণাতুর হইয়া সেই জলাশয়েই জল পান করিতেছিলেন। তিনি বালিকার রূপে মোহিত হন ও তাহাকে বিবাহ করিয়া এদেশে থাকিয়া যান। তাহার নারায়ণ ও বিষ্ণু নামে দুই পুত্র হয়, যথাক্রমে ইহাদের যাদব ও বলরাম নামক দুইটি সুকৃত তনয় জন্মে, তাহদের আবিষ্কৃত খামার ভূমি “যাদব বলাইর কালাইওরা" নামে আজিও চিহ্নিত হইয়া থাকে, এবং তাহাদের বংশ “যাদব বলাইর বংশ বলিয়া পরিচিত" । বলরামের বৃদ্ধ প্রপৌত্রের নাম লালচন্দ্র ও মুলুকচন্দ্র; লালচন্দ্রের পুত্ৰই লবকিশোর। লবকিশোর যৌবনে কাছাড় জিলার লক্ষ্মীপুর থানার পোলিশের দারোগা ছিলেন। পোলিশের স্বভাবসিদ্ধ গুণাবলী যে তাহাতে ছিল না, এমন নহে। তিনি একজন তেজস্বীপুরুষ ছিলেন। “ঈশ্বর মঙ্গলময়" এ কথায় তাহার একান্ত বিশ্বাস ছিল, এজন্য বিপৎপাতে তিনি ভরসাশূন্য ১৪৩. পদ্মপত্রে উপবেশনপূৰ্ব্বক জপ করিতে যাহারা বাল্যকালে দেখিয়াছিলেন, এইরূপ দুই এক জন বৃদ্ধ জীবিত আছেন বলিয়া আমাদের বিবরণ দাতা লিখিয়াছিলেন ।