পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬০ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত চতুর্থ ভাগ গৃহস্থাশ্রম পাঠ সমাধা করিয়া, সেই অল্প বয়সেই নিমাই নবদ্বীপে ব্যাকরণের এক টোল স্থাপন করেন। তাহার টোলে দেখিতে দেখিতে বিস্তর ছাত্র জুটিল ছাত্রদিগের পাঠের সুবিধার জন্য নিমাই একখানা ব্যাকরণের প্রস্তুতক্রমে তদ্বারা তাহাদিগকে শিক্ষাদান করিতেন; উহা “বিদ্যা সাগরী টিপ্পনী" নামে খ্যাত ও দেশে সুপ্রচারিত হইয়াছিল। এই সময়েই নবদ্বীপবাসী বল্লভাচার্যের কন্যা লক্ষীদেবীর সহিত তাহার বিবাহ হয় ইহার পরে কাশ্মীর দেশীয় কেশব নামক একজন পণ্ডিত, ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন পণ্ডিত সকলকে শাস্ত্রবিচারে পরাস্ত করিয়া, নবদ্বীপের পণ্ডিত সকলকে জয় করিতে আগমন করেন। নবদ্বীপের পণ্ডিতগণ তাহার নাম শুনিয়া ভীত হইয়াছিলেন, কিন্তু নিমাই পণ্ডিত অবলীলাক্রমে তাহাকে পরাস্ত করেন। ব্যাকরণীয়া পণ্ডিত নিমাইর নিকট পরাজিত হইলে, সেই গর্বিত পণ্ডিতের অহঙ্কার দূর হইয়া মন পবিত্র হয় এবং তিনি নিমাইকে অসাধারণ পুরুষ বুঝিয়া তাহার শরণাপন্ন হন। নিমাই কোন ব্যক্তিকেই সৰ্ব্বসমক্ষে লজ্জিত অপদস্থ করিতে চাহিতেন না, এই জন্য সন্ধ্যার পরে এই পণ্ডিতের সহিত বিচার করিয়াছিলেন। ইহার পর নিমাই পণ্ডিতের মনে এক অভিলাষ জনিল, তিনি “বঙ্গদেশে গমন করিতে ইচ্ছা করিলেন। শ্রীহট্টে তাহার পূৰ্ব্বপুরুষদিগের বাটী, সুতরাং পৈতৃক বাসস্থানে দেখিতে কৌতুহল জনিবে, তাহাতে আশ্চৰ্য্য কি?”৫ নিমাই এই উদ্দেশ্যে নবদ্বীপ হইতে যাত্রা করিয়া পদ্মাবতীর তীরে আগমন করিলেন। তৎপরে পদ্মা নদী পার হইয়া তিনি বঙ্গদেশের ভিন্ন ভিন্ন অংশে পরিভ্রমণ করেন । চৈতন্য ভাগবতে লিখিত আছে যে— “বঙ্গদেশে মহাপ্রভু হইলা প্রবেশ । অদ্যাপিও সেই ভাগ্যে ধন্য বঙ্গদেশ॥” অপিতু— অদ্যাপিও সেই ভাগ্যে সৰ্ব্ব বঙ্গ দেশে । শ্রীচৈতন্য সঙ্কীৰ্ত্তন করে স্ত্রীপুরুষে।” প্রাজ্ঞ গ্রন্থাকার কর্তৃক “সৰ্ব্ব বঙ্গদেশ” পদের প্রয়োগ হওয়ায়, কেবল পদ্মাতীরবর্তী ফরিদপুরাদি নহে, শ্রীহট্ট ময়মনসিংহাদি সমস্ত পূৰ্ব্ববঙ্গ উদ্দিষ্ট হইয়াছে বলিয়াই বোধ হয়। শ্রীহট্টে গমন প্রাচীন প্রেমবিলাসাদি গ্রন্থে শ্ৰীগৌরাঙ্গে যে শ্রীহট্টগমন সংবাদ লিখিত আছে, তাহা হইতে জানা যায় যে, প্রথমতঃ তিনি পদ্মাতীরে অনেক ছাত্রকে শিক্ষাদান করেন, তৎসঙ্গে ঐ সকল স্থানে তিনি হরিনাম সংকীৰ্ত্তনও প্রচার করেন।৬ পূৰ্ব্ববঙ্গেই তাহার কীৰ্ত্তন-বিলাস প্রথমে প্রকটিত হয় । আশ্চর্য্যের বিষয় যে নবদ্বীপে থাকাকালে বা ইহার পরে তথায় গিয়া তিনি ভ্ৰমেও হরিনাম করেন নাই। নিমাইর তাবৎ চরিত্রই অভিনয়বৎ। পদ্মাতীরে অবস্থিতিকালে মহাপ্রভুর মনে পিতৃ জন্মভূমির দর্শনাভিলাষ জন্মে,৭ তাহাতেই তিনি বিক্রমপুরের নূরপুর উপস্থিত হন ও তথা ৪. কলাপের আরও একটি “বিদ্যাসাগরী টীকা” পার কৈল সব লোকে আপনি যাচিয়া॥ শ্রীহট্টের ঢাকাদক্ষিণ নিবাসী বাণীনাথ বিদ্যাসাগর "—চৈতন্যমঙ্গল । কর্তৃক বিরচিত হয়। অদ্যাপি ঢাকাদক্ষিণে ৭, “কিছুদিন থাকি প্ৰভু ভাবিলা মনেতে। বিদ্যাসাগরের বংশীয়েরা আছেন, তাহাদিগকে যাইতে হইল মোর শ্রীহট্ট দেশেতে। "সাগরের বংশ" বলে এবং ইহারা আবাল বৃদ্ধ পিতৃ-জন্মস্থান পিতামহের দেখিয়া। সকলেই “বিদ্যাসাগর" উপাধিতে খ্যাত । পদ্মাবতী তীরে ঝাট আসিব চলিয়া৷” ৫. বঙ্গ দর্শন ১২৮৪ সাল। —প্রেমবিলাস । ৬. “নাম সঙ্কীৰ্ত্তন প্ৰভু নৌকা সাজাইয়া। ৮. অধুনা ইহা পদ্মাগর্ভে বিলুপ্ত।