পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[সাত] শিক্ষিতদের অধিকাংশই জানেন না। গুণের আদর ও মর্যাদা যেখানে নেই সেখানে গুণী জনো না, কথাটি কী সর্বাংশে সত্য? বাংলাদেশের হাজার হাজার বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, সারাদেশটি যদি একটি দেহ হয় শ্রীহট্ট বা আজকের সিলেট তার মস্তক স্বরূপ বলতে হবে । হিন্দু-মুসলমান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সিলেট (শ্রীহট্ট) গৌতম বুদ্ধ, শ্রীচৈতন্য, শাহজালাল (রঃ) কাল থেকেই এদেশের গণমানুষের পুণ্যভূমি । কারা বাস করতেন সেখানে, কেমন ছিলেন তারা? তাদের জীবনযাত্রাসহ এলাকায় প্রচলিত সর্বপ্রকার কিংবদন্তি এই বইয়ে অতি যত্নের সাথে পরিবেশিত হয়েছে। শ্রী চৌধুরীর বিজ্ঞানমনস্কতার ফলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিংবদন্তিগুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও প্রদান করা হয়েছে। মোট কথা শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পড়তে শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত পাঠক স্বস্তি পাবেন বলে বোধহয় না। অন্যদিকে পুস্তক প্রকাশের ব্যয় আজকালকার বাজার মূল্য হিসেবে কম হলেও সেকালে একেবারে কম ছিল না । প্রথমত ৯০০ কপি প্রায় ২৫০০ টাকা, সেই ব্যয়ভার বহন করাও তত্ত্বনিধির পক্ষে সম্ভব ছিল না। অবশেষে একজন মহানুভব ব্যক্তি কোনো প্রকার আর্থিক লাভালাভ ছাড়াই সেই টাকাটা যোগান দিয়েছিলেন এটাও ইতিহাস বটে। আজকের দিনে বর্তমান সমাজে এরূপ দৃষ্টান্ত কয়টির দেখা মেলে? আরও একটি দৃষ্টান্তমূলক বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন— তত্ত্বনিধি ব্যক্তি হিসেবে দেশ-জনগণ ও জাতির প্রতি কেমন দায়বোধ করতেন সেই ঘটনা তার প্রমাণ । তার জন্য গ্রামের ডাকঘর মৈনা-ডাকঘরটি পাথারকান্দি অফিসের অধীনস্থ একটি শাখা অফিস হিসেবে চালু ছিল । পরিচালনার ঝামেলার জন্য কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ করে দিতে উদ্যোগী হন। তখন তত্ত্বনিধি নিজেই এগিয়ে এসে তার পরিচালনার ভার নিজের কাধে তুলে নেন। কানাই বাজারের ঐ অফিসে গ্রামের পথের পাশে– জমিদারির কাছারি বাড়িতে এক কোণে বসে আম, জাম, কাঠাল আর বঁাশবনের ছায়ায় ঘরের কোণে লাল রঙের টিনের চিঠির বাক্স ঝুলছে: হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে পোস্ট মাস্টার "খালি গা, পরনের ধুতি হাটুর ওপর তোলা চোখে গোল ফ্রেমের চশমা এটে ডাকঘরের পরিত্যক্ত কাগজে ইতিহাস রচনা করছেন– কল্পনা করা যায়? কাজের প্রতি, দেশের প্রতি কতটুকু মমত্ববোধ থাকলে এমন কাজ করা যায় আজ তাও বিবেচনার দাবি রাখে । পুস্তক প্রকাশের পর সমগ্র ভারতবর্ষে তা কেমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তাও ভেবে দেখবার মতো । সেকালের বিখ্যাত সব দৈনিক সাপ্তাহিক পত্র- পত্রিকা এর গুণকীর্তন করেছিল । ইংরেজি দৈনিক এমপায়ার অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে । গুণকীর্তন করে ঐতিহাসিক চিত্র’, ‘প্রবাসী’, ‘সাহিত্য সংবাদ’, ‘অমৃতবাজার’, ‘আনন্দবাজার’, ‘ঢাকা রিভিউ', 'সম্মিলন’ এরাও । গ্রন্থ রচনায় তত্ত্বনিধি মহাশয় একাদিক্রমে পনেরো বছর ব্যয় করেন। তার বক্তব্যের কিয়দংশ উপস্থাপন করে আমার বক্তব্য শেষ করি ; তিনি লিখেছেন "দীর্ঘকালের চেষ্টা ও প্রায় পঞ্চদশ বৎসরের পরিশ্রমে শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সম্পূর্ণ প্রকাশিত হইল। ইহাতে অবশ্যই আনন্দিত হইবার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটি ঘটনা মনে হইয়া আজ সে সুখ পূর্ণাঙ্গ উপভোগ করিতে পারিতেছি না। ইতিবৃত্তের কপি লইয়া যখন সৰ্ব্বপ্রথম কলিকাতায় যাইতে হয় সেই সময় মদীয় সহধর্মিণী পীড়িত হইয়া পড়েন; আমার আগমনাপেক্ষায় তাহার সুচিকিৎসার