পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ অধ্যায় : বুরুঙ্গা, রেঙ্গা ও ঢাকাদক্ষিণের ব্রাহ্মণ বং শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ৭৫ মাটির মমতা ব্রাহ্মণ আধুষিত এই প্রাচীন গ্রামের যাবনিক নাম কেন হইয়াছিল, ইহাই তাহার ইতিহাস । সদাশিবের অধিকার “সদাশিবের মাটি” বলিয়া পরিকথিত হয়। সদাশিব ও তাহার মাটির প্রতি আজ পর্যন্ত তত্ৰত্য লোকের অবিচলিত ভক্তি দেখা যায়। আজ পর্য্যন্ত দুই ব্যক্তিতে তর্ক উপস্থিত হইলে বা প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হইতে হইলে, “সদাশিবের দোহাই"র অব্যাহত প্রভাব লক্ষিত হয়। আজ পর্য্যন্ত লোকের “সদাশিবের কাশী ছাড়িতে ইচ্ছা হয় না ।" আজও পুত্র-প্রসঙ্গ বাসুদেব ব্যতীত সদাশিবের বাচস্পতি ও রতিকান্ত বা রতাই পণ্ডিত নামে আরও দুই পুত্ৰজাত হয়। বাচস্পতি নাম নহে। সম্ভবতঃ দ্বিতীয় পুত্রের উপাধিই বাচস্পতি ছিল। রতিকান্তের কোন উপাধি না থাকিলেও বিদ্যা গৌরবে ইনি পণ্ডিত নামে খ্যাত হন। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বুরুঙ্গার রাঘব বিদ্যানিধির বিবরণ বর্ণিত হইয়াছে। রতই পণ্ডিত ইহার সমসাময়িক ছিলেন। একদা কোন ব্যাপার উপলক্ষে প্রখ্যাতকীৰ্ত্তি রাঘব নিমন্ত্রিত হইয়া বেগমপুরে আগমন করেন ও “রাজপণ্ডিতি”র দাবী করেন । রাজপণ্ডিতি কি? পূৰ্ব্বে যে সকল শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত বিভিন্ন পরগণায় হিন্দুশাস্ত্র-সম্মত ব্যাপারাদিতে ব্যবস্থা দিতেন ও তদুপলক্ষে বিদায় পাইতেন এবং বিচার কাৰ্য্যে প্রয়োজনানুসারে ঐ সম্বন্ধে যাহাদের অভিমত প্রামাণ্য বলিয়া গ্রহণ করা হইত, তাহারাই “রাজপণ্ডিত” গণ্য হইতেন ॥১ রাঘব বেগমপুর হইতে রাজপণ্ডিতির বিদায় পাইবার দাবী করিলে রতাই প্রতিবাদী হইলেন । রাঘব রাজপণ্ডিতি পাইবেন কেন? রাজপণ্ডিতি পাইবার কারণ কি? ইত্যাদি জিজ্ঞাসায় জানিলেন যে, শাস্ত্র বিচারে জয়লাভ করিয়া তিনি সৰ্ব্বত্রই এই বৃত্তি প্রাপ্ত হইয়াছেন। রতাই তখন বিদ্যানিধিকে বিচারে আহবান করিলেন! কোথায় বিদ্যানিধির অগাধ বিদ্যা, আর কোথায় রতাইর সামান্য জ্ঞান-নিষ্ঠা? রতাইর উন্মত্ত-গৰ্ব্বে বিদ্যানিধি হাসিয়া উঠিলেন, সমাগত লোকমণ্ডলী কৌতুহলাক্রান্ত হইয়া চাহিয়া রহিল। কিন্তু যখন রতাই কিছুতেই প্রতি নিবৃত্ত হইলেন না, যখন বিচার আরম্ভ হইল, তখন রতাইর অপ্রত্যাশিত পাণ্ডিত্যের পরিচয় প্রাপ্তে সভাস্থ সকলেই বিস্মিত হইল। বিদ্যানিধি চমকিত হইলেন। উদার বিদ্যানিধি রতাইর জ্ঞান গৌরবে বিমোহিত হইয়া সহর্ষে পরাজয় স্বীকার করিলেন; আর বিচার চলিল না, বিদ্যানিধি বেগমপুরের রাজপণ্ডিতি পাইলেন না; রতাই সদাশিবের মাটির সম্মান রাখিয়া দিলেন। সদাশিবের মাটির কিয়দংশ পরে অরঙ্গপুর গ্রাস করিয়া ফেলে। কথিত আছে, অরঙ্গপুরের এক মোসলমান মহিলার বেগমপুরে এক “ভইনারি" অর্থাৎ সখী বা সই ছিলেন, স্বপুত্রের বাসের জন্য তাহার নিকট উক্ত মোসলমান মহিলা কিছু ভূমি দান প্রার্থনা করিয়া দুইহাল ভূমি দান প্রাপ্ত হন;২ এবং তথায় উঠিয়া গিয়া বাস করেন। এই দুই হাল ভূমির উপলক্ষে মোসলমানগণের সংখ্যা বেগমপুরে পরে ক্রমশঃ বৃদ্ধি ১. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বংশ-২য় ভাগ ২য় খণ্ড চতুর্থ অধ্যায়ে রাজপণ্ডিতির উল্লেখ আছে।