পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখবন্ধ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত দুই অংশে বিভক্তপূৰ্ব্বাংশ ও উত্তরাংশ । পূৰ্ব্বাংশে- ভৌগোলিক বৃত্তান্ত ও ঐতিহাসিক বৃত্তান্ত । উত্তরাংশে– বংশবৃত্তান্ত ও জীবনবৃত্তান্ত । পূৰ্ব্বাংশ পূৰ্ব্বে প্রকাশিত হইয়াছে, এইবার উত্তরাংশ হইল। বহুদিনে বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়াই শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পরিসমাপ্ত হইল । যশের আশায় শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত সঙ্কলনে প্রবৃত্ত হই নাই- এ গুরুভার বহনের যোগ্য নহি বলিয়াই ধারণা। লভোর লালসায়ও এ কাৰ্য্যে বৃত হই নাই,- ইহাতে যে লভ্য হইবে না, অনুমানে পূৰ্ব্বেই তাহা কতকটা বুঝিয়াছিলাম। তবে সাধ করিয়া এ ভার মাথায় কেন লইলাম? বাল্যকালে যখন শ্রীহট্টে নয়াশড়কের বাসায় পড়িতাম, শ্রীহট্ট-প্রকাশ সম্পাদক স্বগীয় প্যারীচরণ দাসের সহিত আলাপ সম্ভাষণের জন্য শহরের যে সকল গণ্যমান্য লোক আসিতেন, অন্তরালে থাকিয়া তাহাদের কথা কখন কখন শুনিতে পাইতাম; ইহাতে আমোদ ও শিক্ষা উভয়ই হইত। একদিন শ্রীহট্টের স্কুল সমূহের তদানীন্তন প্রখ্যাত-নামা ডিপুটী ইনিসপেক্টর স্বগীয় রায় সাহেব নবকিশোর সেন মহাশয়ের সহিত শ্রীহট্টের গৌরব কাহিনী লইয়া তাহার আলাপ হয়; উভয়েই বিজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ ও দেশ-বৎসল; উভয়ের শ্রীহট্টের পূৰ্ব্বগৌরব-স্মরণে বিমুগ্ধ ও তন্ময়চিত্ত হইয়া পড়িয়াছিলেন । কথাও উঠিয়াছিল; এবং স্থিরীকৃত হইয়াছিল প্রাগুক্ত ডিপুটী ইনিস্পেক্টর বাবু, সম্পাদক মহাশয়কে যথোচিত সহায়তা করিবেন এবং সেই ক্ষুদ্র নোটটি বিবৰ্দ্ধিত করিয়া প্রকাশের চেষ্টা করা যাইবে । কিন্তু কাৰ্য্য বোধ হয় সেই পর্যন্ত্যই স্থগিত থাকে। গৃহদাহে নেই নোটটিও ভস্মসাৎ হইয়া যায় । উভয় বন্ধুই অতঃপর এতদ্বিষয়ে উদাসীন হইয়া পড়িয়াছিলেন; তাহাদের সেদিনকার উৎসাহ, সেদিনকার তন্ময়ভাবে, মনে যে ভাবোনাষ হইয়াছিল, মন যেরূপ উন্মাদিত হইয়াছিল, স্মৃতি হইতে তাহা মুছিয়া যায় নাই। মনে হইত, আমাদের শ্রীহট্ট কম কিসে? শ্ৰীমহাপ্রভুর যাহা পিতৃভূমি— যাহা দর্শন করিতে তিনি নবদ্বীপ হইতে আসিতে পারেন, সে দেশের মাহাত্ম্য আছে। তখন আর তত জানিতাম না, কিন্তু কবির কথা মনে জাগিত, ভাবিতাম “সতত শ্রীহট্ট শ্রীব আচল আবাস । প্রকৃতির প্রীতি নেত্রে তাহাই প্রকাশ”। কবি স্বগীয় প্যারীচরণের পদ্য পুস্তক ।