পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত - উত্তরাংশ.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৩ প্রথম অধ্যায় : পঞ্চখণ্ডের ব্রাহ্মণগণ 0 শ্ৰীহট্টের ইতিবৃত্ত দেবতাকে তাহার অভাব পূরণ করিতে হইল, স্বীকার করিতে হইল যে, তাহদের ক্রটি গৃহীত হইবে না । বাসুদেব বিজয়ের প্রেমে মুগ্ধ, বিজয়ও বাসুদেবের একান্ত ভক্ত; তাই বাসুদেব বিজয় এবং বিজয়ের বংশধর ব্যতীত অন্য কাহারও দ্বারা পূজিত হইতে চাহেন না। বিজয় যথাকালে পুত্রের হাতে সেবা সমপণ করিয়া যোগ্যধামে গমন করিলেন। এই দুই জনের ছয়টি পুত্ৰজাত হয়, তাহাদের বংশধরগণই বাসুদেবের সেবাধিকারী; বাসুদেবের যাহা কিছু আয়, ইহারাই তাহা প্রাপ্ত হন। নবাব শুকুরুল্লা খা বাহাদুরের সময়ে বাসুদেবের সেবা পরিচালনার জন্য ৪৫ টাকা বৃত্তি নিৰ্দ্ধারিত হয়। সেই সময় হইতেই বথযাত্রা ও বারুণীর মেলা আরম্ভ হয়। এই বংশীয় হরিনাথ চক্ৰবৰ্ত্তীর পুত্ৰ শস্তুদেব, তৎপুত্র শুকদেব, তাহার পুত্র বাসুদেব, ইহার পুত্র চণ্ডীচরণ তর্কভূষণ। ইনি ত্রিপুরাধিপতির পণ্ডিত-সভায় প্রায়শঃ যাইতেন, তথায় তাহার বার্ষিক ৫০ টাকা বৃত্তি অবধারিত ছিল। ইহার জ্যেষ্ঠ পুত্র রমাকান্ত জ্যোতিষজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন, এবং চতুর্থ পুত্র অভয়াচরণ বহুদশী চিকিৎসক ছিলেন। চণ্ডীচরণের ৩য় পুত্রের নাম চন্দ্রকান্ত, ইহার পুত্র শ্রীযুক্ত নীরদচন্দ্র চক্রবত্তী হইতে এই বংশের কাহিনী প্রাপ্ত হওয়া গিয়েছে। অনিপণ্ডিতের পরাশরগণ পঞ্চখণ্ডের নাম পূৰ্ব্বাংশে করা গিয়াছে। পঞ্চখণ্ডই সাম্প্রদায়িক বিপ্রবর্গের আদি নিকেতন। সম্প্রতি (১৩২০ বাং) পঞ্চখণ্ডে ভাস্কর বম্মার যে তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়াছে পঞ্চখণ্ডের সহিত তাহার সম্বন্ধ না থাকিলেও এ স্থানে উহা আসিবার কারণ ইহাই অনুমতি হয় যে, তাম্রশাসন প্রাপক বা তদীয় উত্তরাধিকারী পূৰ্ব্বকালে এস্থলে আসিয়া বাস করিয়াছিলেন। মিথিলাগত পঞ্চবিপ্রের বাসভূমি পঞ্চখণ্ড অতি প্রাচীন ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত ভূমি। পঞ্চব্রাহ্মণের আগমনের পূৰ্ব্বে এ স্থলে টেঙ্গর নামক কুকি সম্প্রদায় বাস করিত, তাহা বলা গিয়াছে। উক্ত কুকি সম্প্রদায়ের বাস হেতু পঞ্চখণ্ড “টেঙ্গইর” নামে খ্যাত ছিল, সেই পুরাতন নামের স্মৃতি এতকাল পরেও জনশ্রুতি বিস্তুত হয় নাই।” মিথিলাগত পঞ্চ বিপ্র-বংশীয়দের মধ্যে পরাশর গোত্রীয়গণ অন্যতম। পঞ্চখণ্ডে পরাশর গোত্রীয় সাম্প্রদায়িক আর এক বংশীয় ব্রাহ্মণ আছেন; পঞ্চখণ্ডের অনিপণ্ডিত নামক স্থানে জন্ম হইয়াছিল, তাহার নামানুসারে তদীয়বসতি স্থান “অনিপণ্ডিত” নামে খ্যাত হয় এবং তদ্বংশীয়গণ তদবধি “পণ্ডিত এই সাধারণ উপাধি ধারণ করিয়া আসিতেছেন। “অনিপণ্ডিত” গ্রামের মহাত্মা অনিপণ্ডিত দেবকল্প সিদ্ধপুরুষ ছিলেন। পরবর্তীকালেও এই বংশে শুকদেব সিদ্ধান্ত, রাধাকান্ত ন্যায়ভূষণ, রতিকান্ত ন্যায়ভূষণ, রতিকান্ত বিদ্যালঙ্কার প্রভৃতি খ্যাতনামা পণ্ডিতবর্গের উদ্ভব হয়। এই বংশে তীক্ষ্ণধী শ্যামানন্দ ২ বিজয়া পত্রিকা-আষাঢ় ১৩২০ বাংলা। ৩ পঞ্চখণ্ড উৎকৃষ্ট আনারসের জন্মভূমি, ঐ আনাবস পূৰ্ব্বে “টেঙ্গবী আনারস” নামে খ্যাত ছিল। ইদানীং "জলডুবি আনবিস’ বলিয়া কথিত হয়। সাধাবণ লোকে “আনারস” অথবা “বিবতুম” বলে। আশ্চর্যোব বিষয যে আনারস নামটি ব্ৰেজিল দেশীয়, ইহাব লেটিন নাম আনানস সেটাইবা ।